১৪ মাসে ১১৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন ইউএনও তমাল হোসেন


নাটোর প্রতিনিধি: বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন শুরু থেকেই নিয়েছিলেন অনন্য উদ্যোগ।

গুরুদাসপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধের একটি তথ্যে পাওয়া গেছে ইউএনও’র সৃজনশীল কর্মদক্ষতায় গত ১৪ মাসে ১১৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি।

যোগদানের পর থেকেই গুরুদাসপুর উপজেলাকে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন উপজেলা হিসাবে গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছেন। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নের প্রায় সকল জায়গায় তার ব্যপক পরিচিতি রয়েছে। ছোট-বড়,বয়-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই তার ভক্ত।

কেননা যোগদানের পর থেকেই তিনি থেমে থাকেননি কখনও। করোনা মহামারীর সময়ে জনসাধারনের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে স-পরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।

করোনা মুক্ত হয়েই আবারও নিজের কর্মস্থলে ফিরে মানুষের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করে চলছেন। বিভিন্ন সময় নিয়েছেন ব্যতিক্রমী সব উদ্যোগ। তার প্রতিটি উদ্যোগে পাল্টে গেছে গুরুদাসপুর উপজেলার চিত্র। বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া ১১৪টি মেয়েই এখন নিয়মিত স্কুল-কলেজে যাওয়া শুরু করেছে।

পাল্টে গেছে তাদেরও জীবন। উপজেলার প্রায় প্রতিটি মাঠে এখন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে খেলাধুলা করে। প্রতিটি মাঠে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের ও নিজ অর্থায়নে খেলোয়রদের মাঝে বিতরণ করেছেন খেলাধুলা সামগ্রী। মাদক ছেরে প্রায় প্রতিটি এলাকার শিক্ষার্থীরা এখন খেলার মাঠে সময় দেয়।

এই কর্মকর্তা গুরুদাসপুর উপজেলায় ২০১৯ সালের ১১ জুন যোগদান করেন। যোগদানের এক সপ্তাহ পরেই উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিং বিষয়ে জনগনকে সচেতন করার লক্ষে করেছেন মাইকিং, দিয়েছেন উপজেলার জনগুরুত্বপুর্ণ স্থানে বিলবোর্ড এবং বিলি করা হয়েছে লিফলেট।

এছাড়াও ফেসবুক পেইজে বাল্য বিবাহ ও ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে করেছেন সচেতনতামুলক সমাবেশ। শুধু তাই নয় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধ সভার পাশাপাশি করেছেন পিঠা উৎসব।

শুধু তাই নয় কখনও বর যাত্রী, কখনও কনে যাত্রী, কখনও আবার শিক্ষার্থী এবং কখনও সাধারণ মানুষ সেজে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গত ১৪ মাসে ১১৪ টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি।

বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আকলিমা, নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, নতুন করে তারা আবার স্কুলে যেতে পারছে। তাদের সপ্ন একদিন বড় হয়ে দেশ ও দেশের কল্যাণে কাজ করবে। বিয়ে হলে এ সপ্ন আর পুরণ হতো না। ইউএনও তমাল হোসেনের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা এটাও জানান যে তাদের স্কুলের গেটে স্থাপন করা হয়েছে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ করনীয় বিলবোর্ড।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ নিলুফা ইয়াসমীন ১৪ মাসে ১১৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউএনও তমাল হোসেনের সঙ্গে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া মাত্রই তৎখনাত বন্ধ করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে জরিমানা-মুচলেকা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, যোগদানের পর থেকেই গুরুদাসপুর উপজেলাকে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত পরিচ্ছন্ন উপজেলা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে নিয়েছি বিভিন্ন উদ্যোগ।

উপজেলার জনগুরুত্বপুর্ণ স্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সকল জায়গায় বাল্যবিবাহ এবং ইভটিজিং প্রতিরোধ বিষয়ক বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। বাল্য বিবাহ একটি অভিশাপ কারন এর ফলে একজন মেয়ের শিক্ষা যেমন বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি সুন্দর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েরা যেন তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে যেতে পারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ থাকে সেই বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.