এবার গদি টেকাতে কী পারবেন এরদোয়ান

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান দেশটিতে গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন। দেশটিতে আগামী ১৪ মে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে এরদোয়ান বিরোধীদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। খবর বিবিসির।
দেশটিতে এবার এরদোয়ান বিরুদ্ধে ছয়টি দল একতাবদ্ধ হয়েছে। দলগুলো এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একক প্রার্থী হিসেবে বিরোধী নেতা কেমাল কিলিচদারুগলুকে দাঁড় করিয়েছে।
এরদোয়ানের শাসনামলে তুরস্ক ক্রমশই একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তবে এবারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তুরস্কের এমন পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন ঘটাতে চাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির নাজেহাল অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধগতি, জোড়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু-এবার এরদোয়ানকে নাজুক করে দিয়েছে। তুরস্কের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যতো ভোট পড়বে, কোনো প্রার্থী যদি তার ৫০ শতাংশের বেশি পান, তাহলে তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এটি না হলে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই তুরস্কের ভোটাররা বিভক্ত। কিন্তু ৬৯ বছর বয়সী এর আগে এমন চাপের মুখে আর পড়েননি। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, এরদোয়ানের চেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী জোটের প্রার্থী এগিয়ে আছেন।
২০০২ সাল থেকে এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে) ক্ষমতায় আছে এবং ২০০৩ সাল থেকে তুরস্ক শাসন করছেন এরদোয়ান। এবারের নির্বাচনে দেশটিতে ৬০ লাখ নতুন ভোটার ভোট দেবেন। নতুন প্রজন্মের এসব ভোটার এরদোয়ান ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক নেতাকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে দেখেন নি।
এরদোয়ান শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এরপর ২০১৪ সালে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। ২০১৬ সালে ব্যর্থ এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান নাটকীয়ভাবে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। তুরস্কে তিনি হয়ে ওঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
বর্তমানে এরদোয়ান বিশাল এক প্রাসাদ থেকে তুরস্ক পরিচালনা করেন। একইসঙ্গে দেশটির বেশিরভাগ মিডিয়াই তার মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে। দেশটিতে চরম মুদ্রাস্ফীতির জন্য বেশিরভাগ তুর্কি নাগরিক এরদোয়ানকে দায়ী করেন। এর কারণ এরদোয়ান ব্যাঙ্কের সুদের হার বাড়াতে রাজি হননি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের বেশি কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ হার আসলে ১০০ শতাংশেরও বেশি।
ভঙ্গুর অর্থনীতির মধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটিতে এতে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়। দেশটির ১১ টি প্রদেশে লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
সেইসময় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান নিয়ে এরদোয়ান সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হয়। একইসঙ্গে অভিযোগ ওঠে, নির্মাণ খাতে বড় ধরনের অনিয়মের কারণেই ভূমিকম্পে এতো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভূমিকম্পের আগ পর্যন্ত এসব প্রদেশে এরদোয়ানের প্রচুর সমর্থন ছিল। এসব প্রদেশের কয়েকটিকে এরদোয়ানের পার্টির ঘাঁটি হিসেবে দেখা হতো। ধারণা করা হচ্ছে, এসব প্রদেশের ওপরেই এরদোয়ানের জয় পরাজয় নির্ভর করছে।
তবে এরদোয়ানের জন্য এবারের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রধান ৭৪ বছর বয়সী কেমাল কিলিচদারুগলু। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে তিনি বিরোধী জোটের একক প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এরদোয়ানকে ঠেকাতে দেশটিতে এবার ছয়টি বিরোধী রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে এই জোট গঠন করেছে।
এছাড়া নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে দেখা গেছে, কেমাল কিলিচদারুগলু জনপ্রিয়তার দৌড়ে এরদোয়ানের চেয়ে এগিয়ে আছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.