এত অত্যাচার কেনে হাঁরঘে উপর, হাঁরা কুঁনঠে যাবো-কি খাবো-পরিবার লিয়্যা বন্দি : দ্যাশে কি এগল্যা দ্যাখার কেহু নাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: হাঁরা কুঁনঠে যাবো-কি খাবো-পরিবার লিয়্যা বন্দি হয়্যা গেছি। দ্যাশে কি এগল্যা দ্যাখার কেহু নাই। এত অত্যাচার কেনে হারঘে উপর, মাটি দিয়্যা জিন্দাতেই মনে হছে পূঁত্যা ফেলা দিছে হামরাকে। গরিবের দিকে আল্লাহ ছাড়া কেহু দেখার নাই। যারঘে দায়িত্ব, তাঁরা দেখ্যাও না দেখার মতন বস্যা আছে।
আমারঘে পানি বন্ধ, ঘাঁটা বন্ধ, বাড়ির উপড়ে পাহাড় কর‌্যা মাটি পালা দিয়্যাছে মুখলেশ। পানি হল্যে ঘরের মধে পানি ঘুকবে, আর মাটি গল্যা পাহাড়ের মতন ধস্যা ধস্যা আমারঘে ছেলে-মেয়্যারহে বুকের উপর পড়বে। হামরা এখন জিন্দাতেই মরা। মুখেলেশের লোকেরা হামারঘে মেয়েছ্যেল্যরাগে উপর মুখ খারাপ কর‌্যা গ্যাইল দিছে, আর শরিরের উপরও অত্যাচার চালাইতে আসছে? হাঁরঘে দ্যাশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকে ঘর দিয়ে শুত্যা থাকার জাগা কর‌্যা দিছে, আর মুখলেশ আর অর লোকজন হামরাকে অত্যাচার কর‌্যা তাড়াইছে। এটা কি এখ্যানকার অফিসাররা দেখতে পায়না? এখন কথায় বলে, ‘তেলীর মাথায় তেল’ হামরা গরিব তো, তাই হারঘে দিকে তাকাইছে না কেহু।
মুখলেশ বড়লোকতো, তাই অর দিকেই এখানকার অফিসার রা। না হল্যে ম্যালাদিন থ্যাক্যা হামরাকে তাড়াইবার ল্যাগা পায়তারা করছে মুখলেশ আর অর ভাইয়েরা। কিন্তু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারের ঘে কথাতে হামরা সরকারী জাগাতে কোন রকমে চাল তুল্যা ম্যালাদিন থ্যাকা বাস করছি। সরকারী জাগা থ্যাকা এখন হামরাকে চল্যা যাওয়ার লাগ্যা উঠ্যা পড়্যা লাগ্যাছে মুখলেশ।
এ জমি খ্যানি লিয়্যা মুখলেশ পুকুর ক্যাট্যা মাছ ছাড়বে। কহতো, সরকারী জমিতে হামরা আছি তো, অর কি? এমনই বিলাপ বকছিলেন মুখলেশ ও তাঁর বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের নওহাট্টা মৌজার জামতাড়া ছিত্রাপুকুরের ৬০ বছর বয়সী বিধবা ফুরি বেগম ও বিজলী বেগমসহ সেখানে বাস করা পরিবারের নানা বয়সী মহিলা ও পুরুষরা।
দীর্ঘদিন থেকেই সরকারী জমি থেকে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করে সফল হতে না পেরে এবং আদালতে মামলা চলমান, প্রশাসনে অভিযোগ সব মিলিয়ে জোরপূর্বক এবং নির্যাতন করে সেখান থেকে উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠেছেন গ্রামীণ ট্রাভেলস্ এর চেয়ারম্যান, জোসনারা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের নব্য সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোখলেশুর রহমান। অবৈধ হলেও চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি জমিতে একটার পর একটা পুকুর খনন কাজ।
সম্প্রতি স্থানীয় ও জাতীয়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গ্রামীণ ট্রাভেলস্ এর চেয়ারম্যান, জোসনারা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী, আলহাজ্ব মোখলেশুর রহমানের অমানবিক কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন তাঁর লোকজন দিয়ে। আরও উচু করে বাঁধ দিয়ে চারিদিক ঘিরে ফেলার আদেশ দেন তাঁর লোকজনকে। তাঁর কথামতই কাজ করছে মোখলেশুরের লোকজন। একটির স্থানে ২টি স্ক্যাপাটার দিয়ে কাজ চালানো শুরু করেছেন গতকাল শুক্রবার (২৯ জানুয়ারী) থেকে।
এদিকে, সরকার ভূমিহীনদের জন্য সরকারী জায়গা দখলবাজদের হাত থেকে দখলমুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ি তৈরী করে অসহায়, গৃহহীন-দুঃস্থদের দিচ্ছেন। এখানে সরকারের তত্বাবধানে থাকা প্রায় ১২ বিঘা জমিতে অনেক গৃহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন সরকার।
একদিকে, স্থানীয় প্রশাসন সরকারী জমি খুঁজে জেলায় দখলমুক্ত করছেন, আর চোখের সামনে এত পরিমান জমি ভূমিদস্যু ও দখলবাজরা নতুন করে দখল করছে? তখন প্রশাসন যেন নিরব ভূমিকা পালন করছেন? এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ওই সরকারী জমি রক্ষা এবং ভূমিহীন অসহায় মানুষদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের ভাবমূর্তি জনগণের কাছে রহস্যময়ী। স্থানীয় সচেতন মহল চান, এখানকার এত বিশাল পরিমান জমি দখলমূক্ত করে একটি সুন্দর ও পরিবেশ বান্ধব প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরী করে এলাকার এবং সেখানে বসবাসকারী ভূমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সেখানে বাস করা আব্দুল মালেকসহ ভূক্তভোগী নারী-পুরুষরা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদক জানান, আমাদের বাড়ি জমি নদী ভাঙ্গনে চলে গেলে রাস্তার পাশের্^ সরকারী জমিতে ঘর করে বসবাস শুরু করি ২০০৬ সালে দিকে। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের (ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন) সময় রাস্তার পাশের সব ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে ফেলে। তখন এখানকার চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আমাদের এই সরকারী জমিতে ঘর করে থাকতে বলে, আমরা সেই ১৩/১৪ বছর থেকে এখানে ২ কাঠা, ৩ কাঠা জমির উপর বাড়ি-ঘর করে যে যার মত করে বাস করছি।

তখন কিছু পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু টাকা দিয়ে উঠিয়ে দেয় মুখলেশ। আমরা বেশ কিছু পরিবার এখনও বাস করছি। নানান ধরণের নির্যাতন সহ্য করেই বাস করছি। তারপর কয়েকদিন থেকে মুখলেশ ও তাঁর লোকজন চরম অত্যাচার করছে এবং সরকারি জমিতে থাকা আমাদের বাড়ির চারিদিকে বিশাল আকৃতি ও উচুঁ করে বাঁধ দিচ্ছে স্ক্যাপাটার দিয়ে। যেন আমরা বাধ্য হয়ে ওই জমি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
কিন্তু আমাদের তো আর থাকার কোন জায়গা নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও দখল করে নিচ্ছে। আমাদের পরিবারের মহিলাদের উপরও নানাভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে। এমনকি কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষনিক নিয়ে যাওয়ার কোন বুদ্ধি নেই আমাদের।
এছাড়া কয়েকদিন আগে মিলের পাশর্^বর্তী আব্দুল মালেকের জমির আবাদ করা আড়াই বিঘা জমির গম জোরপূর্বক কেটে নিয়ে চলে গেছে মুখলেশুরের লোকজন। আব্দুল মালেক এই সরকারী জমি রক্ষা ও তাদের পরিবারগুলোর উপর অত্যাচার বন্ধের দাবীতে আইনগত বিচার ও প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন, তাই তার উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেশী।
এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (আজ শনিবার ৩০ জানুয়ারী বিকেল) ২টি স্ক্যাপাটার দিয়ে কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও সরকারী জমির চারিদিকে উচুঁ বাধ দিয়ে ঘেরার কাজ চলমান রয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার তদারকি বা সরজমিন অবস্থা পরিদর্শণ করা হয়নি বলে জানিয়েছে ভূক্তভোগী পরিবারগুলো।
অন্যদিকে, এসব ভূমিহীন পরিবারের লোকজনদের উপর নির্যাতন বন্ধে ভূক্তভোগীদের পক্ষে কথা বলায় ঝিলিম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মতু ও গ্রাম পুলিশ শ্রী প্রেমলাল কর্মকারকে আজ শনিবার সকালে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও দেখে নেয়ার হুমকী দিয়েছেন মোখলেশুরের সহচর এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু আব্দুল হামিদ ও মো. নজরুল, বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে গ্রামীণ ট্রাভেলস্ এর চেয়ারম্যান, জোসনারা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব মোখলেশুর রহমানের সাথে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদক আজ শনিবার বিকেলে যোগাযোগ করলে নানাভাবে অসংলগ্ন কথা বলেন এবং হুমকী দেন। সব মিলিয়ে সরকারী জমি রক্ষা, অসহায় ভূমিহীন পরিবারগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসবেন স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এমনটায় আশা করছেন ভূক্তভোগী পরিবারগুলো ও সচেতন মহল।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.