উপমহাদেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা নেতৃত্ব অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর জন্ম শতবার্ষিকী ১৪ই এপ্রিল

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: আমাদের দেশের এক কিংবদন্তি রাজনীতিকের নাম অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। উপমহাদেশের বাম প্রগতিশীল আন্দলনের প্রবাদ পুরুষ, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা, গরীবের বন্ধু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ রাজনীতিকে ব্যবসা নয় বরং ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আগামী ১৪ই এপ্রিল তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী।
১৯২২ সালের ১৪ই এপ্রিল তিনি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় বর্ধিষ্ণু গ্রাম এলাহাবাদে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক আলহাজ্ব কেয়াম উদ্দিন ভুইয়া, মাতার নাম আফজারুন্নেছা। ১৯৩৭ সাল থেকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মানসহ অর্থনীতি শাস্ত্রে এম, এ এবং পরে পরিসংখ্যান বিষয়ে ইনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত অর্থনীতি বিষয়ে দেশের বিভিন্ন সকরারি কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন।
১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সে সময় সরকারি চাকুরীতে কর্মরত থাকার সুবাদে তার প্রাপ্ত ফ্ল্যাট ৮/ আই আজিমপুর কলোনীতে রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো, সেটা তখন ভাষা আন্দোলনের হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নিজ আসন কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে প্রভাবশালী মুসলিম লীগ প্রার্থী ও তদানিন্তন শিক্ষা মন্ত্রী মফিজ উদ্দিনকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে প্রাদেশিক পরিষদে তিনিই প্রথম পুর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবী উত্থাপন করেন।
১৯৫৮ সালে স্বৈরচারী আইয়ুব খান প্রবর্তিত সামরিক শাসনামলে বৈরী পরিবেশে থেকেও তিনি স্বৈরচারী আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন সংগঠিত করেন। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা হুলিয়া জারী করা হয় এবং ধরিয়ে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এই অনিবার্য কারণেই তাঁকে “আত্মগোপন জীবন” বেছে নিতে হয়। দীর্ঘ আট বছর দুঃসহ আত্মগোপন জীবনের পরিসমাপ্ত ঘটিয়ে ১৯৬৬ সালে তিনি আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলেন।
১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির (ন্যাপ) এর সভাপতি হন। তিনি তদানিন্তন অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। স্বৈরচারী আইয়ুব এর বিরুদ্ধে সক্রিয় নেতৃত্ব দান এবং ১৯৬৯-এ ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালনের ফলশ্রæতিতে তখন তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।
পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি আইয়ুব খান আহুত রাওয়ালপিন্ডের “গোল টেবিল বৈঠকে” পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ৭১’ এর ১৭ই এপ্রিল মুজিব নগরে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকার শপথ গ্রহণ করলে ১৮ই এপ্রিল ন্যাপের পক্ষ থেকে তিনি অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন জানান।
মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের “উপদেষ্টা পরিষদের” একজন অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি রণাঙ্গনে থেকে যেমন মুক্তিযুদ্ধকে সংঘঠিত করেছেন তেমনি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জনমত গঠনে সোভিয়েত রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ৭১’ এর সেপ্টেম্বরে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ন্যাপ, সি,পি,বি এবং দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। ১৯৮২ সালে স্বৈরচারী এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাক্কালে তিনি আবার কারারুদ্ধ হন।
পার্টির কর্মী, সমর্থক এবং জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার উপরে তিনি অনেক বই ও পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন যেমন “সমাজতন্ত্র কি এবং কেন”? “প্রকৃত গণতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার কথা”, “অমার্কসবাদী সমাজতন্ত্র,” “কিছু কথা” “মুক্তির পথ” “রাজনৈতিক পরিভাষা,” “সমাজতন্ত্রের সৈনিক হইতে হইলে” ইত্যাদি।
১৯৮২ সালে ঢাকার অদূরে মদনপুরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশে একমাত্র রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র “সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ” সকল প্রগতিশীল মহলের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর সহধর্মীনি মিসেস আমিনা আহমদ ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি ও কন্যা আইভি আহমদ ন্যাপের দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকরী সভাপতি।
এ দেশের গরীব সাধারণ মানুষের মুক্তির দিশারী, ধর্ম কর্ম, গণতন্ত্র নিশ্চয়তাসহ সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা, দেশ ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীর একটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পবিত্র রমজানের কারনে প্রিয় নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর জন্ম দিনে কোন আড়ম্বর অনুষ্ঠান নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে জন্ম দিনে শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় ১৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় তাঁর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকাল ৪টায় ন্যাপ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন, জন্মদিনের কেক কাটা ও ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পার্টির সকল জেলা ও উপজেলা কমিটির যথাযথভাবে ১৪ই এপ্রিল অধ্যাপক মেজাফফর আহমদের জন্ম শতবার্ষিকী উৎযাপন করবেন। ২৮ শে মে জাতীয় ভাবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ জন্ম শতবার্ষিকী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বার্তা প্রেরক ইসমাইল হোসেন. ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক. ন্যাপ, কেন্দ্রীয় কমিটি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.