উদ্যানে নয়, নয়া পল্টনেই হবে মহাসমাবেশ : মির্জা ফখরুল

কুমিল্লা ব্যুরো: কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়া পল্টনেই হবে মহাসমাবেশ।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, যারা তাকে বলে প্রধানমন্ত্রী। আমরা বলি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। জোর করে দুইবার নির্বাচন করেছে। ২০১৪ আর ২০১৮। ২০১৪ তে কেউ ভোট দিতে যায়নি। ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আর ২০১৮ তে আগের রাতেই নাকি ভোট শেষ। উনি নাকি আবার নির্বাচন করবেন। গত পরশু যাশোরে সভা করেছেন। সভায় তিনি ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ আসলে নাকি জনগণ শান্তি পায়। আর বলেছেন- আবার নৌকায় ভোট দেন। আব্বাস উদ্দিনের একটা গান আছে- ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।’ দেশের সব মানুষ এখন এই গান গাইতে শুরু করেছে। ভুলে যান, ওই নৌকার কথা ভুলে যান। এখন বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের বিদায় দেখতে চায়। সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন। তা না হলে এদেশের মানুষ আপনাদের বিদায় করবে’।
বেলা ১২টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। পবিত্র কোরআন, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় বিএনপির দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরই মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মোস্তাক মিয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বেলা ১২টার আগেই ১১টায় শুরু হয়ে গেছে কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ সমাবেশে মানুষের ঢল নেমেছে। সমাবেশস্থল কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে টাউন হল মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। ঠাঁই নেই নগরীর সড়ক-অলিগলিতেও। বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরুর আগে নগরীর টাউন হল মাঠে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী বেগম খালেদা জিয়া ও অনুসারী নেতাদের ছবি সম্বলিত রঙ-বেরঙের টি-শার্ট, গেঞ্জি, টুপি পরে তারা অপেক্ষায় আছেন সমাবেশ শুরুর। বৃহৎ সমাবেশ করতে মুখিয়ে আছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির গণসমাবেশে আসা নেতা–কর্মীরা নেচে-গেয়ে, মিছিল করে, শুয়ে-বসে সমাবেশস্থলে শুক্রবার রাতে কাটিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। অনেককে মাঠে কম্বল গায়ে শুয়ে থাকতেও দেখা গেছে।
সমাবেশে জনস্রোত টাউন হল মাঠ ছাড়িয়ে কুমিল্লা কান্দিরপাড় সড়ক কানায় কানায় ভরে গেছে। মিছিল-শ্লোগান ও মাইকিংয়ে মুখরিত নগরী। সমাবেশস্থলের চারদিকের সড়কপথে হাজারো জনতা মিছিল নিয়ে আসছেন। নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কপথে সমাবেশস্থল অভিমুখে যাচ্ছেন। 
নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আর এগুনো যাচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে নগরীর কান্দিরপাড়-টমছমব্রিজ, কান্দিরপাড়-চকবাজার, কান্দিরপাড়-শাসনগাছা, কান্দিরপাড়-প্রেসক্লাব সড়কে নেতাকর্র্মীরা অবস্থান নিচ্ছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। কুমিল্লা শহর যেন এক মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন কৌতুহল রয়েছে, তেমনি দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস-আনন্দ। টাউন হল মাঠ ও আশপাশের এলাকায় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ধানের শীষ প্রতীকের কোটপিন বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শুক্রবার রাতেই কুমিল্লায় এসে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে কুমিল্লায় এসে পৌঁছেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু গত ২২ নম্বের থেকে কুমিল্লায় অবস্থান করছেন। কুমিল্লার এই বিভাগীয় সমাবেশ দলটির ৮ম গণসমাবেশ। দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও হুমড়ি খেয়ে সমাবেশে এসেছেন। এদিকে গণসমাবেশ উপলক্ষে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব মেডিক্যাল ক্যাম্প খুলেছে।
এদিকে টাউন হলের মাঠের ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩০ ফুট প্রস্থ ও ৬ ফুট উচ্চতার সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে। মূল মঞ্চের কাছে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য স্টেজ করছেন বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার। শনিবার বেলা সোয়া ১২টা থেকে দলটির কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। দুপুরের পর থেকে বক্তব্য দেবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সমাবেশ সঞ্চালনা করবেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হাজী মো. জসিম উদ্দিন ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু। এই গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন।
গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘ্নে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধগতি, ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার, গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা, মামলাসহ সরকারের নানান নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশের সকল বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির গণ-সমাবেশ চলছে। এদিকে কুমিল্লার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টাউন হল মাঠ ছোট হওয়ার কারণে সড়কে লোকের সংখ্যা মাঠের চেয়ে বেশি। মাইক লাগানো হয়েছে সমাবেশস্থল থেকে নগরীর বহু দূরের সড়কেও।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান আব্দুল্লাহ আল মানছুর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.