উজিরপুরে ৬৯ বছর পরে নির্মিত হচ্ছে স্থায়ী শহীদ মিনার : ২৬৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ মিনার নেই ১৮১টিতে

উজিরপুর প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুরে ২১শে ফেব্রয়ারী আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত হচ্ছে স্থায়ী শহীদ মিনার।
উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগীতায় ইউডিপি প্রকল্পের অর্থায়ানে ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে ১৪ ফেব্রয়ারী থেকে তড়িগড়ি করে শহীদ মিনার নির্মানের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠান। উপজেলার ২৬৬টি  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহিদ মিনার নেই ১৮১ টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে।
উপজেলার ১৮১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫০টিতে শহীদ মিনার নেই, ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০টিতে শহীদ মিনার নেই, ১৩টি কলেজের মধ্যে একমাত্র উজিরপুর মহিলা কলেজে শহীদ মিনার নেই,২২টি মাদ্রাসার মধ্যে শহীদ মিনার নেই ২০টিতে। ১৭ ফেব্রয়ারী সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১৯৬৯ প্রতিষ্ঠিত হয় বড়াকোঠা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর পরে ওই বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার হওয়ায় আানন্দ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক,শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিবাবক বৃন্দ।
এব্যাপারে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফা খানম বিউটি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘদিন পরে বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার হওযায় ইউএনও সহ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান, তিনি এবং আমরা অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেন। ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী বেল্লাল হোসেন, নিবির, ৯ম শ্রেনীর জোতি, ৮ম শ্রেনীর মীমসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী আনন্দ প্রকাশ করে বলেন ২১শে ফেব্রয়ারী আসলেই আমরা প্রতিবছর কলা গাছ কেটে শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিতাম। এবছর নতুন স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় তারা মহাখুশি।
ওই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রনতি বিশ্বাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান ১৯৫২ সালে এই মাতৃ ভাষার জন্য রফিক,সফিক,বরকত,সালামসহ অগনিত তাজা প্রান শহীদ হয়েছিলেন। তারই ফলশ্রæতিতে ১৯৭০ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হয়েছে। আর এই ভাষা শহীদদের জন্যে কিছু করতে পারা অত্যান্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়। তাই প্রধান শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে কিছু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
১৯৫২ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আত্মহতি দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম রফিক, সফিক, বরকত ছালাম। আরো নাম না জানা আরো অনেকেই। আর এই ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই ১৯৭১ সালে লাখো লাখো মুক্তিপাগল বাঙালিরা ঝাপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি জান্তা পাক হানাদার বাহিনির বিরুদ্ধে।
অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। বাঙালী জাতি পেয়েছে লাল সবুজের পতাকা এবং স্থায়ী ভ‚খন্ড। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রয়ারী থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রæয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। মে মাসে ১১৩ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়। তাই এ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর উজিরপুর প্রতিনিধি আঃ রহিম সরদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.