নদীয়া (ভারত) প্রতিনিধি: সম্প্রতি ভারতে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উচ্চশিক্ষার পাঠক্রমে স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমা কোর্স হিসেবে জ্যোতিষ শাস্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছে।
জ্যোতিষশাস্ত্রের মতো একটি অবিজ্ঞান ও জালিয়াতিতে সরকারি শিলমোহর দেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি পয়লা আগস্ট গোটা রাজ্যজুড়ে জ্যোতিষ বিরোধী নানান কর্মসূচি পালন করলো।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখা গত ৩১ শে জুলাই থেকে সপ্তাহব্যাপী নবদ্বীপ শহর জুড়ে জ্যোতিষ ও জ্যোতিষশাস্ত্র বিরোধী পোস্টারিং, লিফলেট বিলি এবং শহর ও গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে পথসভা করে জনগণকে সচেতন করে চলেছে।
প্রতারক জ্যোতিষীদের খপ্পরে পরে যাতে কেউ টাকা খরচ না করেন তারও আবদেন রাখা হয় সমিতির তরফ থেকে।পথচারীদের নানা প্রশ্নের উত্তরও দেন যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরা।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস্ ভট্টাচার্য বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে জ্যোতিষের অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় সংবিধানের ৫১এ ধারা অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক মেজাজ ও অনুসন্ধিৎসা গড়ে তোলবার মৌলিক কর্তব্যের সাথে বেমানান।
“উচ্চশিক্ষার পাঠসূচি থেকে জ্যোতিষশাস্ত্র যাতে বাদ দেওয়া হয় তার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস্ ভট্টাচার্য প্রতিবাদ পত্র পাঠান ইগনুর ভাইস চান্সেলর, ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডি পি সিংহ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং ভারতের প্রেসিডেন্ড শ্রী রাম নাথ কোভিড মহাশয়কে।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, “আজকে জ্যোতিষের ঠগবাজি কারবার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারে, তবে আগামী দিনে কবিরাজ, তান্ত্রিক, পকেটমার বা ছিনতাইবাজরাও তাদের বিদ্যায় একইভাবে সরকারি শিলমোহর চাইলে আমাদের বলার কিছুই থাকবে না।
মনে রাখতে হবে, এদেশের সংবিধান অনুযায়ী জ্যোতিষচর্চা কোনও বৈধ পেশা নয়। পেশাগত কর বিষয়ক আইন ১৯৭৯-এ আইনসম্মত পেশার তালিকায় জ্যোতিষ পেশার নাম নেই।
আবার, যদি কেউ মন্ত্র-তন্ত্র, দোয়া-তাবিজ, কবচ-মাদুলি বা কোনও প্রলোভনের সাহায্যে মানুষের রোগ সারানোর দাবি করেন বা দাবিসহ বিজ্ঞাপন দেন, ড্রাগস্ অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিস (অবজেকশনাবল্ অ্যাডভারটাইজমেন্ট) অ্যাক্ট ১৯৫৪ অনুযায়ী তিনি আইনের চোখে অপরাধী।
জ্যোতিষীদেরও এই আইনে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। সরকার ও ইউজিসি জ্যোতিষশাস্ত্রকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে বিজ্ঞান বিরোধী, মানবতা বিরোধী কাজ করেছে। এর বিরুদ্ধে জনমত গড়তে সমস্ত সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে।”
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য অর্পন রায় বলেন, “বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন উচ্চশিক্ষার পাঠ্যসূচিতে অপবিজ্ঞান ও প্রতারণামূলক জ্যোতিষশাস্ত্র অন্তভূক্ত করে দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করছে এবং কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিচ্ছে যা সংবিধান বিরোধী কাজ।”
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.