ইরান শাসনের বিরুদ্ধে শ্রমিক-ছাত্র-প্রবাসীদের বিক্ষোভ

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের কুর্দি অঞ্চলে মানুষ হত্যা, ছাত্রদের গ্রেফতার এবং সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিক, ছাত্র ও প্রবাসীরা। শনিবার ইরানের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল কারণ বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানাতে সাধারণ জনগণ তাদের কাজ বন্ধ করে দেন এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেয়।
কুর্দি অঞ্চলের জনগণের সমর্থনে বিক্ষোভ করার জন্য তেহরানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আহ্বানের পর আমিরকাবির, তেহরান, শরীফ, বেহেশতি এবং অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবস্থান নেয় ও ধর্মঘট করে।
শ্রমিকরাও এই আন্দোলনে সাহায্য করার জন্য তাদের ভূমিকা পালন করেছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার ট্রাক ড্রাইভার ইউনিয়ন দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এবং ইস্পাত ও অটোমোবাইল কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
এসফাহান স্টিল কোম্পানি, আলভান্দ সরমাআফারিন ইনকর্পোরেশন, মোরাত্তাব কার ম্যানুফ্যাকচারিং, সেফ খোদ্রো কার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, কাজভিনের পার্স অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানি এবং আরও কিছু শ্রমিক দিনের বেলায় ধর্মঘট ঘোষণা করেছে।
এসফাহান স্টিল কোম্পানি ইরানের একটি প্রধান কর্পোরেশন যার চার হাজার কর্মচারী রয়েছে। এটি মূলত নির্মাণ ইস্পাত এবং রেল উৎপাদনকারী।
ফ্রি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে, ওয়েল্ডিং কর্মীরা মধ্য ইরানের কেরমান প্রদেশের বাফাক ইস্পাত কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পালন না করার প্রতিবাদে ধর্মঘটে গিয়েছিলো। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে একটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে তাদের দুই সহকর্মীর মৃত্যু হয়।

Untitled-1

এরইমধ্যে কারাবন্দী সিভিল অ্যাক্টিভিস্ট হোসেন রোনাঘীকে জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিন্নমতাবলম্বী এই ব্লগার এবং স্বাধীনতা নাগরিক কর্মীকে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ইরানি নাগরিকদের বিক্ষোভের সমর্থন করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। এমনকি কারারক্ষীরা তাকে আটকে রেখে পা ভেঙে দেয়।
কিছু রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরানের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় ভোরিয়া গাফৌরির মুক্তির খবর প্রকাশ করেছে। ইরানের জাতীয় দলের সদস্যদের আচরণের বিষয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্যের পর এই সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতদের পরিবারের প্রতি কোনো সমর্থন না দেখানোর সমালোচনাও করেন।
তবে, ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা ‘অবহিত সূত্র’ উদ্ধৃত করে তার মুক্তির খবর অস্বীকার করেছে। গত দুই মাস ধরে প্যারিস, মিলান, ইস্তাম্বুল, স্টকহোম, গোথেনবার্গ, মালমো, বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, আরহাস, বুদাপেস্ট এবং আরও অনেক জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মিলানে ইরানিদের প্রতিবাদ সমাবেশ নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার আন্তর্জাতিক দিবসের সঙ্গে মিলে যায়। তাই বিক্ষোভকারীরা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং ইরানে নারী ও শিশু হত্যা বন্ধের দাবি জানায়।
সুইডেনের স্টকহোমে বসবাসকারী ইরানিরাও ইরানি কুর্দিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এবং কুর্দি অঞ্চলে হত্যা ও নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাতে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়েছিলো। ইস্তাম্বুলে বসবাসরত শত শত ইরানি নারী অধিকার কর্মীদের একটি দলের সঙ্গে একটি সমাবেশ করেছে।
ইরানের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ইস্তাম্বুল থেকে তেহরান, আমি ইরানের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করি। তারা খামেনির মৃত্যু হোক বলেও স্লোগান দেয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.