ইয়াবা-হেরোইন কেনাবেচায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

 

ঢাকা প্রতিনিধি: ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন পরিবহন, কেনাবেচা, ব্যবসা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হস্তান্তর, সরবরাহ ইত্যাদি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের বিধান রেখে সংসদে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮ পাস হয়েছে। বিলে মাদকদ্রব্যের অপরাধের ৩৪টি তফসিল বর্ণনা করে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। অবশ্য বহনের পরিমাণ অনুযায়ী সাজা কমবেশি হতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া আরো দু’টি বিল পাশ এবং তিনটি বিলের রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপন করা হযেছে।

গতকাল শনিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি পাসের আগে বিরোধী দলের ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বেগম রওশন আরা মান্নান, বেগম নূর-ই-হাসানা লিলি চৌধুরী, নূরুল ইসলাম ওমর, ডা. আককাছ আলী সরকার, নূরুল ইসলাম মিলন ও বেগম মাহজাবীন মোরশেদ বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিরোধী দলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্য বিলটিতে সংশোধনী এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেন।

বিরোধী দলের সদস্যেদের প্রস্তাবের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাদক একটি ভয়াবহ ব্যাধি। এখানে শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলব। সেজন্য আমরা আইনে অর্থলগ্নি, পৃষ্ঠপোষকতা, মদদদাতা সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছি। মাদক নির্মূল করতে না পারলে আমরা রূপকল্প- ২০৪১ বা ২০২১ যাই বলি, কিছুই অর্জিত হবে না। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এর আগে গত ২২ অক্টোবর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

পাস হওয়া বিলে মাদকপ্রবণ জেলা সদর বা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদক অপরাধ দমন ট্রাব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনাল মাদক অপরাধের বিচার করবে। মাদক অপরাধে গ্রেফতারের পর তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কৃর্তক জামিন প্রদানে বাধিত রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে কোকেন, কোকো মাদক চাষাবাদ, উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ২৫ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড  যাবজ্জীবন দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আর ২৫ গ্রামের নিচে হলে কমপক্ষে দুই বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডে বিধান আছে।ইয়াবা বহনের ক্ষেত্রে ২০০ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তবে ১০০ গ্রাম বা মিলিলিটার হলে সর্বনিম্ন ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির ডোপ টেস্টে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে কমপক্ষে ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হবে।

বিলে বলা হয়েছে, কেউ যদি সজ্ঞানে কোন মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনের জন্য তার মালিকানাধীন অথবা দখলি কোন বাড়িঘর, জায়গাজমি, যানবাহন, যন্ত্রপাতি অথবা সাজসরঞ্জাম কিংবা অর্থ সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি দেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড ভোগ করবেন। এছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত না এমন কোনো ব্যক্তির কাছে অথবা তার জায়গায় যদি মাদকদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য কোনো যন্ত্রপাতি,ও য়াশ অথবা অন্যান্য উপকরণ পাওয়া যায় তাহলে তিনি সর্বনিম্ন ২ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-।

বিলে বলা হয়েছে, অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করতে পারবে না। আর চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কোন সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করার অনুমোদন দেওয়া যাবে না।

বিলে বলা হয়েছে, আইনে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অপরাধ তদন্তের ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের ক্ষমতা থাকবে। মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। মাদক অপরাধ বিচারের জন্য গঠিত মাদক দ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে এর বিচার হবে। ট্রাইবুনালে মামলা স্থানান্তরের ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিস্পতির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ক্যামারায় ধারণকৃত ছবি, অডিও ফুটেজ মামলার সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।

এছাড়া গতকাল  বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিল ২০১৮ এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বিল ২০১৮কন্ঠ ভোটে সংসদে পাস হয়।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.