আ.লীগের সংঘর্ষে ঢাকায় নিহত যুবকের শরীরে ৪৮ গুলির ক্ষত

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধটা মাত্র চার মাসের পুরোনো। এর আগ পর্যন্ত দুই পক্ষ একত্রে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় জমি, মাটি ভরাট ও ঠিকাদারির ব্যবসা করেছে। পরে রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি এসব ব্যবসা নিয়েও দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়, যা গড়িয়েছে খুনোখুনিতে।

গত রোববার দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয়েছেন বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান ওরফে দুখু মিয়া (৩২)। পুলিশের তৈরি সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত কামরুজ্জামানের শরীরে ৪৮টি গুলির ক্ষত (বুলেট ইনজুরি) পাওয়া গেছে। খুব কাছ থেকে শটগান দিয়ে গুলি করায় ছররা গুলিতে এত বেশি জখমের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা পুলিশের। ছররা গুলি লেগেছে আরও সাতজনের শরীরে।

বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি বলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন । তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল হত্যায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ধরতে কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় ব্যবহৃত কোনো অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি বলে জানান ওসি।

সোমবার দুপুরে কামরুজ্জামানের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বেরাইদে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় দাফন করা হয়। নিহত কামরুজ্জামানের ভাই চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের অভিযোগ, সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহ নিজের ছেলেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর করতে চেয়েছিলেন, তাতে তিনি (জাহাঙ্গীর) বাগড়া দেওয়ায় গত জানুয়ারি থেকে তাঁদের বিরোধ শুরু হয়।

সেই বিরোধের জেরে জাহাঙ্গীর ও তাঁর পক্ষের লোকজনের ব্যবসাতেও বাধা দেওয়া হচ্ছিল। এসব নিয়ে মামলা এবং জিডিও করেছেন তাঁরা। ১৩ এপ্রিল ব্যবসায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে জিডিও করেছিলেন নিহত কামরুজ্জামান। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বাজারদরের তিনভাগের একভাগ দামে মসজিদের জমি কেনারও অভিযোগ করেন তিনি।

তবে সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহ জাহাঙ্গীরের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তিনি গুলশানে একটি সরকারি বাড়িতে থাকেন। জীবনে চারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, একবারও সরকারি প্লটের আবেদন করেননি। জমির প্রতি তাঁর কোনো লোভ নেই। মসজিদের জমি কম টাকায় কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না।

তাঁর ভাগনেদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য বলেন, ঘটনার সময় তো তারা ছিল না। এখন কেউ মামলা দিলে দিতে পারে। নির্বাচনের প্রার্থিতা নির্ধারণের বিরোধ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য বলেন, প্রার্থী হিসেবে তিনি তাঁর ছেলে হেদায়েতুল্লাহর পাশাপাশি জাহাঙ্গীরের নামও রেখেছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।

গতকাল বেরাইদ এলাকায় স্থানীয় লোকজন জানান, রহমতুল্লাহর ডান হাত হিসেবেই সবাই জাহাঙ্গীরকে চিনতেন। এই এলাকায় একটি আবাসন কোম্পানির জমি কেনায় মধ্যস্থতা করা, বালু ভরাট ইত্যাদি কাজ দুজনে মিলেমিশেই করেছেন।

তাঁদের বিরুদ্ধে জমি বেচতে জবরদস্তি দাম কম দেওয়া অভিযোগ বিস্তর। বেরাইদ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ শুরু হয়। সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহ নিজের ছেলেকে আর জাহাঙ্গীর নিজে কাউন্সিলর হতে চান। তবে সম্পর্কে ফাটল ধরার এত অল্প সময়েই খুনোখুনি হবে তা ভাবেননি স্থানীয় লোকজন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.