আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট লাপাত্তা গভীর তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে থলের বিড়াল

খুলনা ব্যুরো: বিগত ১৩ মাস ধরে খুলনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আদায়কৃত ইউজার ফি’র মধ্য থেকে দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন ও কৈফিয়ত তলব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে গতকাল সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, কৈফিয়ত তলবের জবাব না দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রকাশ দাস গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর পত্র দিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ।
সিভিল সার্জন জানান, হাসপাতালের ইউজার ফি সঠিকভাবে নিরুপনের লক্ষ্যে গত ২২ আগষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে। যেখানে দেখা যায়, গত বছর(২০২০) জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার ইউজার ফি বাবদ মোট চার কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আদায় হলেও সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র এক কোটি ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
অর্থাৎ আদায়কৃত টাকার মধ্যে ঘাটতি দেখা যায় দু’কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। যেটি সরকারি বিধি বহির্ভুত। ওই টাকা কেন সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি দু’দিনের মধ্যে তার জবাব দেয়ার জন্য গত ২০ সেপ্টেম্বর কৈফিয়ত তলব করা হয়। কিন্তু দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর থেকে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাস গা ঢাকা দেন। ওইদিনের পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায় বলেও সিভিল সার্জন জানান।
এজন্য রোববার কেএমপি কমিমনার বরাবর পত্র দিয়ে তার ওপর নজরদারি রাখার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্যও নজরদারির আবেদন জানানো হয়। সর্বশেষ গতরাতে তার বিরুদ্ধে কেএমপির খুলনা থানায় মামলা দায়ের হয় বলেও সিভিল সার্জন জানান।
এদিকে, বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আদায়কৃত ইউজার ফি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কিভাবে একজন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আত্মসাৎ করলেন তা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিকে কেন এতোদিন কোন গুরুত্বের সাথে দেখেননি সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে এর দায়ভার সিভিল সার্জন যেমন এড়িয়ে যেতে পারেন না তেমনি তার একেবারেই নিকটবর্তী কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)। তাদের অগোচরে দীর্ঘদিন কিভাবে একজন ব্যক্তি এতো পরিমান সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করলেন সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।
যদিও এ ব্যপারে সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বিটিসি নিউজকে বলেন, তিনি গত ডিসেম্বরে যোগদান করেছেন। এরপর একটি বিভাগীয় পর্যায়ের জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তার কাজকর্ম বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। যখনই বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন তখনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
আবার হাসপাতালের আরএমও হিসেবে অনেক আগে থেকেই দায়িত্বে রয়েছেন ডা: এসএম মুরাদ হোসেন। তিনিও কেন এতোদিন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি সেটিও প্রশ্নের দাবি রাখে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের একাধিক সূত্র বলছে, হাসপাতালের কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত। যারা এসব দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই স্ব-ইচ্ছায় অন্যত্র বদলী হয়ে গেছেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে এটি নিয়ে গভীরে গিয়ে তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে বলেও সূত্রটি জানায়। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে প্যাথলজিষ্টের পদটি শূন্য থাকলেও সেখানে কোন ডাক্তার পদায়ন করা হয়নি। যে কারণে প্যাথলজিষ্টের স্বাক্ষর ছাড়াই প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট দেয়া হয়। যেটি স্বীকারও করেন আরএমও ডা: এসএম মুরাদ হোসেন।
সিভিল সার্জন জানান, মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন উর্দ্ধতন দপ্তরে জানানো হয়েছে। যদিও গতকাল সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: জসিম উদ্দিন হাওলাদার বিটিসি নিউজকে বলেন, তিনি গতরাত পর্যন্ত কোন কাগজপত্র পাননি। তবে তাকে মোবাইলে জানানো হয়েছে। কাগজ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি জানান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.