আলোচিত নুসরাত হত্যাকান্ডে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের মৃত্যুদন্ড

ফেনী প্রতিনিধি: আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। আজ বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক মামুনুর রশিদ চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মাত্র সাড়ে ৬ মাসের মাথায় নিষ্পত্তি হয়েছে বর্বরোচিত এ হত্যা মামলার।

দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন গ্রেপ্তারকৃত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহ, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, মাদ্রাসার প্রভাষক নুরুল আবছার, হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, মোহাম্মদ শামীম, ছাত্রদল নেতা নূর উদ্দিন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, নুসরাতের সহপাঠি উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। রায় পড়তে সময় লাগে ১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। রায়ে ১৬ জন আসামীকেই দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত। রায় পড়ার শুরুতেই নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেন আদালত।

আদালত বলেন, গণমাধ্যমের কারণেই এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের ঘটনা দেশবাসী জানতে পারে। এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামিদের কাঠগড়ায় আনা হয়। ৩ মিনিটের মধ্যে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়।

রায় শোনার পর আসামিরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ জানান উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তাঁরা। আসামীরা এ সময় বাদী পক্ষের আইনজীবীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন।

পরে পুলিশ পাহারায় আইনজীবীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহর কার্যালয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানীর শিকার হন।

এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করে। ঘটনায় সিরাজের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে রাফির পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে।

একপর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কক্ষ থেকে ডেকে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে কেরোসিন দিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তার শোর চিৎকারে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও পুলিশ এগিয়ে এসে উদ্ধার করে দ্বগ্ধ রাফিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ৮এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য প্রথমে ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন পরবর্তীতে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো: শাহআলম এ ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।

তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পিবিআই অন্য ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করলে আদালত তা অনুমোদন করেন। গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাত রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ফেনী প্রতিনিধি মোঃ দেলোয়ার হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.