আপগ্রেডেশনে মোংলা বন্দর চট্টগ্রামের বিকল্প হবে : নৌ প্রতিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি: নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হলে তা চট্টগ্রামের বিকল্প হয়ে উঠবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার কাছাকাছি চলে যাবে।
তিনি বলেন, এর মাধ‍্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর ব‍্যবসা-বাণিজ‍্যের প্রসার ঘটবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির মাধ‍্যমে মোংলা বন্দর এগিয়ে যাবে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় হোটেল রেডিসনে মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্পের এক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে মোংলা বন্দর সচল করার পদক্ষেপ নেয়। ব‍্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় এ বন্দরটিকে কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন। বন্দরটি লোকসান কাটিয়ে লাভের ধারায় ফিরে এসেছে।
মোংলা বন্দরের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পশুর নদীর আউটারবারে ড্রেজিং করার ফলে হারবাড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারে। ইনারবারে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে, যাতে বন্দর জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে সই করেন মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা ও ইজিস ইন্ডিয়া কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড গ্রুপের সিইও লরেন্ট জার্মেইন।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরে বর্তমানে জাহাজ, কার্গো, কন্টেইনার ও গাড়ি হ্যান্ডলিং গড়ে ১৭, ১৯, ৮ ও ১৩ শতাংশ বেড়েছে। মোংলা বন্দরের জন্য কৌশলগত মাস্টারপ্ল্যানে যথাক্রমে ২০২৫, ২০৪০ ও ২০৭০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্য প্রস্তাব করেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০৪০ সালের শেষ নাগাদ মোংলা বন্দরে কার্গো, কন্টেইনার ও গাড়ি হ্যান্ডলিং যথাক্রমে ২, ১৫ ও ৩ গুণ বাড়বে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্প’ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ এক হাজার ৫৫৫ কোটি এবং প্রকল্প সহায়তা চার হাজার ৪৫৯ টাকা। প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ইজিস ইন্ডিয়া কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
আপগ্রেডেশন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কন্টেইনার  হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড নির্মাণ, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ, সার্ভিস ভেসেল জেটি নির্মাণ,  আটটি জলযান সংগ্রহ, আবাসিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, বন্দর ভবন, মেকানিকেল ওয়ার্কশপ সম্প্রসারণ, স্লিপওয়ে ও যন্ত্রপাতিসহ মেরিন ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স নির্মাণ, দিগরাজে রেলক্রসিং ওভারপাস নির্মাণ, মোংলা বন্দরের বিদ্যমান সড়ক ছয় লেনে সম্প্রসারণ, বহুতল কার ইয়ার্ড নির্মাণ ইত্যাদি।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দর বছরে এক হাজার ৮০০টি জাহাজ, এক কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো, চার লাখ টিইইউস কন্টেইনার, ১০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিং করতে পারবে। মোংলা বন্দরের বার্ষিক আয় ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমস ও অন্যান্য সংস্থার আয় তিন হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মো: লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.