আন্দামানে নিষিদ্ধ আদিবাসী এলাকায় ঢুকে মার্কিন পর্যটক খুন হলেন

 

বিটিসি নিউজ ডেস্কআন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিষিদ্ধ একটি এলাকায় ঢুকে আদিবাসীদের হাতে খুন হয়েছেন এক মার্কিন পর্যটক।

নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডে প্রবেশের পর স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে মার্কিন নাগরিক জন অ্যালেন চাও (২৭) খুন হন বলে জানায় ভারতের এনডিটিভি।

খবরে বলা হয়, অ্যালেনকে ওই এলাকায় নিয়ে গিয়েছিল সাত মৎস্যজীবী। তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী প্রায় ৪০ জন জারোয়া আন্দামানে বাস করেন। তাদের সঙ্গে বিশ্বের কোনও যোগাযোগ নেই।

মৎস্যজীবীরা পুলিশকে জানান, দ্বীপে পৌঁছনোর সঙ্গে  সঙ্গেই  বছর সাতাশের ওই পর্যটককে টেনে  নিয়ে  যায়  কয়েক জন আদিবাসী।

এরপর মৎস্যজীবীরা দেখতে পান অ্যালেনকে মাটির উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েকজন তার দিকে তীর নিয়ে তেড়ে যান।

আরও কিছুটা  দূরে জনের শরীরের খানিকটা অংশ মাটির নীচে পুতে দেওয়া হয়। এর  বাইরে আর কিছু দেখতে  পাননি বলে মৎস্যজীবীরা  পুলিশকে জানিয়েছেন।

দেহের সন্ধান পেতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তল্লাশি শুরু করেছে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু স্থানীয়দের আচরণের জন্য হেলিকপ্টার মাটিতে নামানো যাচ্ছে না।

আদিবাসীদের বাস এমন এলাকাগুলোতে সকলে প্রবেশ করতে পারেন না। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। সেখানে শুধু আদিবাসীদের বাস বলেই নয়,  ভারতীয় নৌবাহিনীর দিক থেকে এই দ্বীপপুঞ্জের আলাদা গুরুত্ব আছে, জানায় এনডিটিভি।

স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, অ্যালেন গির্জার যাজক ছিলেন। তিনি ঘন ঘন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করতেন। সেন্টিনেল প্রজাতির মানুষের সঙ্গে যেচে আলাপ করতেন। চেষ্টা করতেন তাদের খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করতে।

‘আন্দামান শিখা’  সংবাদপত্রের দাবি, অতীতে মোট পাঁচবার আন্দামান ঘুরে গিয়েছিলেন অ্যালেন। দেখা করতে চেয়েছিলেন আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে। যাতে তাদের কাছেও খ্রিষ্টান ধর্মের বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন। মৃত্যুর আগে গত পাঁচদিনে একাধিকবার নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তা-ও আবার স্থানীয় মত্স্যজীবীদের সাহায্যে।

অ্যালেনের দেহের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে হেলিকপ্টারও। তবে নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে হেলিকপ্টার নামানোর সাহস পাচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। কারণ তাতে আদিবাসী উপজাতিরা রণমূর্তি ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা।

ভারত মহাসাগরের বুকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাস সেন্টিনেলিজদের। বহির্বিশ্ব থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে তারা। নিজেদের এলাকায় বাইরে কারও প্রবেশ একেবারেই পছন্দ নয় তাদের। তা রুখতে নৃশংস পদক্ষেপ করতেও পিছপা হয় না।

কোনও মুদ্রা ব্যবহার করে না সেন্টিনেলিজরা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না সরকারও। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন বা তাদের এলাকায় প্রবেশকে বেআইনি বলে গণ্য হয়। ভিডিও ক্যামেরায় তাদের গতিবিধি রেকর্ড করাও নিষিদ্ধ।

২০১৭ সালে সরকারের তরফে সাফ জানানো হয়, সেন্টিনেলিজরা আদিম অধিবাসী। তাদের নিয়ে কোনওরকম ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা যাবে না।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.