আগামী মাস থেকে বাজারে আসবে আম, চলছে বাগান পরিচর্যা

ছবি: সৈয়দ নাবিল

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি মওসুমে আগামী মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আমের রাজধানীখ্যাত বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বাজারে আসতে শুরু করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে পাকাঁ আম। গুটি ধরে রাখতে চলছে বাগান পরিচর্যার কাজ। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এখন পর্যন্ত বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন বাড়বে। তবে শঙ্কা ঘুরে ফিরেই আসছে রপ্তানীযোগ্য আম চাষিদের কিন্তু তা উড়িয়ে দিয়ে আম রপ্তানী বৃদ্ধিরও আভাস দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী আগামী ২০ মে থেকে বাজারে আসবে সব ধরণের গুটি আম। এরপর ২৫ মে গোপালভোগ, হিমসাগর ও ক্ষিরসাপাতা ২৮ মে, লক্ষনভোগ ১ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বায় ৫ জুন, আ¤্রপালি, ফজলী ও সুরমা ফজলী ১৫ জুন, আশ্বিনা ১ জুলাই বাজারে নামবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, আম রপ্তানি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে ব্যাগিং পদ্ধতিতে রপ্তানীযোগ্য আম উৎপাদনের আগ্রহ বাড়াতে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বিভাগটি। এছাড়া কৃষকের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রেও বিভাগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে এবার আম রপ্তানী বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, গত বারের লোকসান কাটাতে এবার আরো ব্যাপকভাবে ফ্রুটব্যাগে আম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা। স্থানীয় বাজারে চড়া দাম পাওয়ায় এমন আগ্রহ তাদের। কয়েকবছর ধরেই ফ্রুটব্যাগে আম উৎপাদন করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার আম চাষি তসলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে তিনি ফ্রুটব্যাগে আশ্বিনা আম উৎপাদন করেছিলেন। ফলনও হয়েছিলো ভালো। বারবার কীটনাশক প্রয়োগের ঝামেলা না থাকায় উৎপদন খরচ ছিলো অনেক কম।
সর্বশেষ প্রতিমণ আম বিক্রি করেছেন ২৪ হাজার টাকায়। এবার তার দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরাও ফ্রুটব্যাগে আম উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাদের অধিকাংশই গত বছর রপ্তানীযোগ্য আম উৎপাদন করে লোকসানে পড়েছেন। লোকসান কাটাতে এবারো ফ্রুটব্যাগেই ভরসা রাখছেন চাষিরা। বিষয়টি স্বীকার করেন রাজশাহী এগ্রোফুড প্রডিউসার এসোসিয়েশনের আহবায়ক আনোয়ারুল হক। তবে এবার আম রপ্তানী নিয়ে গত বারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাননা তিনি।

জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, গত বছর উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের খামখেয়ালীতে রাজশাহীর রপ্তানীযোগ্য আম উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এবার তারা চান উৎপাদিত রপ্তানীযোগ্য আমের শতভাগ রপ্তানী। এজন্য আইনী বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি চাইছেন তারা। আম রপ্তানীকারকরা যেনো ভোগান্তিতে না পড়েন সেই জন্য উৎস থেকেই আম রপ্তানীরও সুযোগ চাইছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষি দপ্তরের এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও নজরদারির কথা। কিন্তু এ নিয়ে এখনো তাদের কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুল হক।

তবে বিষয়টি তারা নজরে রাখছেন বলে জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেবু দুলাল ঢালি বলেন, এবছর এখন পর্যন্ত শুধু জেলার বাঘা উপজেলার ২২ জন চাষি আম রপ্তানির করতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। আম রপ্তানি করতে চাইলে কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চাষিদের পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

এদিকে, আমচাষিরা জানান, এখনো আবহাওয়া অনুকূলেই রয়েছে। বাগানে বাগানে গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আমের গুটি। গুটি ঝরেপড়া রোধে আগেভাগেই বাগান পরিচর্যায় নেমেছেন চাষিরা।

জানতে চাইলে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, এখন বাণিজ্যিক আম চাষ হচ্ছে। চাষিরা বছরজুড়েই বাগান পরিচর্যা করছেন। ফলে এখন আর অফইয়ার-অনইয়ার নেই। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলের আবহাওয়া আমের অনুকূলেই রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে বাম্পার ফলন হবে আমের।
দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে বিষমুক্ত আম উৎপাদনে কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি বলেন, সাধারণত ৪০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে আমের গুটি ঝরে যায়। এরপরই ফ্রুটব্যাগিং করতে হয় আম। সেই হিসেবে ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে রাজশাহীর বাগান মালিকদের ফ্রুটব্যাগিং করতে হবে। দেরিতে মুকুল আসায় এপ্রিলের শেষ সপ্তায় ফ্রুটব্যাগিং করতে পারবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা।

এদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট সাড়ে ১২ লাখ টন আম উৎপাদন হয় বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর তা ১৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে রাজশাহীতেই তিন লাখ টনের উপর উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.