বিটিসি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক: ইগলু বরফের তৈরি ঘর বা হোটেল। বাইরে কনকনে ঠান্ডা কিন্তু বরফের সেই ঘরের ভেতরটা উষ্ণ। ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি। কিন্তু কীভাবে হয় এমনটা?
ইগলু বরফ দিয়ে তৈরি, তাই খোলা চোখে ইগলুর ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার সমান হওয়া উচিত।
ইগলুর ভেতরের তাপমাত্রা মাইনাস ৭ ডিগ্রি থেকে থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। কিন্তু এর বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৯ থেকে মাইনাস ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এজন্যই মূলত মানুষ ইগলুর ভেতরে বেঁচে থাকতে পারে।
কিন্তু ইগলুর ভেতরে তাপমাত্রা বাইরের পরিবেশ থেকে বেশি হয় কেন? এর কারণ তিন রকম।
প্রথমত,বাতাসের আপেক্ষিক তাপ ১০৫০ J/kg K। অর্থাৎ ১ কেজি বাতাসের তাপমাত্রা ১ কেলভিন বাড়াতে ১০৫০ জুল তাপের প্রয়োজন। এখন কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ যত বেশি সেটা তত কম তাপ পরিবহন করে। অর্থাৎ বাতাস তাপ গ্রহণ করে গরম হতেও বেশি সময় নেয়, তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হতেও বেশি সময় নেয়।
ইগলুকে বরফ দিয়ে তৈরি মনে হলেও এটা আসলে তা নয়। এটা স্নো বা তুষার দিয়ে তৈরি। তুষারকে চাপ দিয়ে ব্লকের মতো বানানো হয়। তারপর সেটা দিয়ে ভূমির ওপর ডোম আকারে বসিয়ে ইগলু তৈরি করা হয়। ইগলুর এই বিল্ডিং ব্লকগুলো তুষারকে মন্ডের মতো করে তৈরি করা হয় বলে এর ভেতর প্রচুর পরিমাণে বাতাস রয়ে যায়।
বলা যায় তুষারকণার ফাঁকে ফাঁকে বায়ুকণা রয়েছে। ভেতরের এই বাতাস তাপ কুপরিবাহী। তাই বাইরের পরিবেশ থেকে সহজে তাপগ্রহণ করে না। ফলে ইগলুর ভেতরটা থাকে গরম।।
দ্বিতীয়ত, ইগলুর দেয়াল ভেতরের পরিবেশকে বাইরের বায়ুপ্রবাহ থেকে আলাদা রাখে। বায়ুপ্রবাহ কিন্তু বাষ্পায়নের হার বাড়ায়, ফলে মানব শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। একারণে তপ্ত রোদ থেকে ঘরে ফিরে ফ্যান ছাড়লে ঠান্ডা লাগে। কারণ বায়ুপ্রবাহ শরীরের উপরিভাগের ঘামের বাষ্পীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ফলে ঘাম বাষ্পীভূত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তাপ শরীর থেকে শোষণ করে। ইগলুর ভেতরে বায়ুপ্রবাহ থাকে না, ফলে বাষ্পায়নের হার কমে যায়। এবং শরীর উষ্ণ থাকে।
তৃতীয়ত,ইগলুর ভেতরে মানুষ থাকা মানে হলো ইগলুর ভেতরে জ্বলন্ত একটা চুলা থাকা। কারণ, আমাদের শরীরের প্রতিনিয়ত শ্বসন প্রক্রিয়া তাপ উৎপাদন করে। আগেই বলেছি ইগলুর দেয়ালে বায়ুকণিকা রয়েছে। বাতাসের এই কণাগুলো ইগলুর ভেতরে উৎপন্ন তাপ বাইরে যেতে দেয় না। ফলে ইগলু উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হতে থাকে। এছাড়া, এই তাপের কারণে ইগলুর দেয়ালের ভেতরের অংশের তাপ বেড়ে তুষার গলতে শুরু করে। ফলে ভেতরের দেয়ালে তুষারগলা পানির একটা স্তর বা লেয়ার তৈরি হয়। পানির আপেক্ষিক তাপ ৪২০০ J/kg K। অর্থাৎ বাতাসের মতো পানিও তাপ কুপরিবাহী। তাই এই তুষার গলা পানির স্তর ভেতরের তাপকে বাইরে যেতে বাধা দেয়।
এই সবকিছু এক সাথে হয় তাই ইগলুর ভেতরটা উষ্ণ হয়।
এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে, ইগলুর কাঠামো কি ভঙ্গুর?
যদি বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়, তাহলে ইগলুর দেয়ালের তুষার গলে এর কাঠামো ভেঙে যেতে পারে। তবে যদি তাপের তেমন কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে আঘাত না করা অব্দি এটা ভাঙবে না। কারণ, ইগলুর বিল্ডিং ব্লকগুলো ভেতর বরফের চেয়ে বাতাস বেশি, তাই এগুলো ওজনে অত্যন্ত হালকা। তাছাড়া, ইগলু গম্বুজ বা ডোম আকৃতিতে তৈরি করা হয়। এই ডোম আকৃতি প্রকৃতিতে বিদ্যমান শক্তিশালী কাঠামোগুলোর মধ্যে অন্যতম। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.