দরিদ্রতম দেশের তকমা ছাড়ছে হিমালয়ের দেশ ভুটান

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকায় আর থাকছে না হিমালয়ের দেশ ভুটান। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) তালিকা থেকে চলতি বছর ১৩ ডিসেম্বর বের হয়ে যাবে দেশটি।
সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানের (গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস ইনডেক্স) জন্য বিখ্যাত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি এই উত্তরণকে তাদের দেশের তাৎপর্যপূর্ণ সফলতা হিসাবে দেখছেন। ভুটান ছাড়াও বর্তমানে এলডিসিভুক্ত দেশের সংখ্যা ৪৫। খবর এএফপি।
বৃহস্পতিবার কাতারের দোহায় শেষ হওয়া ৫ম এলডিসি শীর্ষ সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘জীবন মানেই অভিযোজন। এটি হারানো এবং লাভ করা সম্পর্কে। আপনি একটি হারাবেন, আরেকটি অর্জন করবেন। আমি মনে করি, আমরা কিছু অনুদানের প্রাপ্যতা হারাতে যাচ্ছি। তবে আমরা আরও ব্যবসার সুযোগ বা আরও বিনিয়োগ আনার সুযোগ পাব। এটি খেলার একটি কৌশল মাত্র।’
দেশটি ২০১০ থেকে  ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাড়াতে পেরেছে। বর্তমানে ৮ লাখ মানুষের দেশটিতে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ ডলারে। যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের  তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। কিন্তু করোনভাইরাস মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ব্যয় বাড়িয়েছে দেশটির। পরিস্থিতি সামলাতে প্রধানমন্ত্রী শেরিং গত বছর বিদেশ থেকে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি নিষেধ করেন।
ভুটানের পর এলডিসির তালিকা থেকে বের হতে পারে (২০২৬ সালের শেষ নাগাদ) বাংলাদেশ, নেপাল, অ্যাঙ্গোলা, লাওস, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং সাও টোমে। তবে তারা বাণিজ্য সুবিধা এবং সহজে ঋণ না পাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এলডিসি উত্তরণের বছর তিনেকের মধ্যে উন্নত দেশ ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে সহায়তা কমতে থাকে। এর কারণে অ্যাঙ্গোলা এবং সলোমনরা এলডিসি থেকে তাদের গ্র্যাজুয়েশসে সময় বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে বাংলাদেশের জন্যও ঝুঁকি রয়েছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে দক্ষিণ এশিয়ার বড় একটি রপ্তানি শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ। এমনকি মাথাপিছু জিডিপিও বৃহৎ শক্তিধর ভারতের উপরে রয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এলডিসি সুবিধাগুলো হারিয়ে গেলে রপ্তানি কমে যাবে। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আর্দশীর কবির বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা মোটেও ভয় পাই না। আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ তৈরি করব এবং এগিয়ে যাব।
২০১১ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে আসে মালদ্বীপ। তবে রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ শীর্ষ সম্মেলনে বলেন, এটি একটি তিক্ত মিষ্টি গল্প। যখন ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী লকডাউন দেশটির অন্যতম অর্থনৈতিক খাত পর্যটনে আঘাত হানে। যা একটি সমৃদ্ধ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশকে তিন মাসের জন্য একটি ‘নন-আয়ের দেশে’ পরিণত করেছিল। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ উচ্চ পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। দেশটির রাষ্ট্রপতি সোলিহ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো চায় গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার পরেও কমপক্ষে ছয় বছরের জন্য বাণিজ্য সুবিধা রাখা হোক। কিন্তু ধনী দেশগুলো তা প্রতিরোধ করছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.