জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠ ‘নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ’ \ শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ ড. মাযহারুল ইসলাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ২০২৪ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে। একই কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সৈয়দ মাযহারুল ইসলাম তরু নির্বাচিত হয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আম, কাঁসা, পিতল, লাক্ষা ও রেশমের জন্য বিখ্যাত এবং গম্ভীরা, আলকাপ, মেয়েলী গীতের মতো অনন্য লোকউপাদানে সমৃদ্ধ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এক সময় এ অঞ্চল ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের এক উল্লেখযোগ্য জনপদ। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলনে এ জেলার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। এমনি এক ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলার উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ রেখে চলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
নবাবগঞ্জ মহকুমা সদর হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর থেকে এই শহরের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে অসংখ্য লোক আসতে থাকে নবাবগঞ্জ শহরে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি এবং দেশ বিভাগের ফলে একটি নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেশ বিভাগের পূর্বে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে হতো আদিনা ফজলুল হক কলেজ, রাজশাহী কলেজ, মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর কলেজ অথবা কলকাতার কোন কলেজে। দেশ বিভাগের ফলে এ অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের কলকাতা কিংবা মুর্শিদাবাদ গিয়ে পড়াশুনার করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। নবাবগঞ্জেও এর হাওয়া লাগে। নবাবগঞ্জ শহরের কতিপয় বিদ্যোৎসাহী মানুষের মনে দানা বাঁধে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা। এ চিন্তাকে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
কলেজ প্রতিষ্ঠার এই মহৎ চিন্তা মাথায় নিয়ে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের এক শুভদিনে এলাকায় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ তৎকালীন হরিমোহন ইন্সটিটিউশন মাঠে এক সাধারণ সভায় মিলিত হন।
মহকুমা প্রশাসক জনাব মোঃ আতিকুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই সভাতেই নবাবগঞ্জ শহরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং শতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি ওয়ার্কিং কমিটি। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট মোঃ নজমুল হক, এ্যাডভোকেট মির্জা মোঃ কাইউম, এ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, এ্যাডভোকেট মোঃ তোবারক হোসেন, নগেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, বিমলরঞ্জন সিংহ, এ্যাডভোকেট বাবু অনিমেশ চন্দ্র মৌলিক ওরফে নিতু বাবু, আব্দুল গফুর বিশ্বাস, আব্দুল লতিফ হোসেন, আবুল ফজল খাঁ, রমেশ চন্দ্র বাগচী, যোবদুল মোক্তার, এ্যাডভোকেট সোলায়মান, এ্যাডভোকেট রইসুদ্দীন আহম্মেদ, কবিরাজ আলফাজ উদ্দীন, মোঃ ফিরোজ কবির, এ্যাডভোকেট তাহের উদ্দীন, ডা. তারাপদ সাহা, ডা. আইয়ুব আলী, হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মোঃ আলতাফ হোসেন, সাদমানী মন্ডল, এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, সাতকড়ি বাবু এবং আরো অনেকে।
কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নামোশংকরবাটী গ্রামের মোঃ মনিমুল হককে অস্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস থেকে হরিমোহন ইন্সটিটিউশনে প্রাতঃকালীন শিফ্টে কলেজের ক্লাস শুরু হয়। ইংরেজি, বাংলা, যুক্তিবিদ্যা, পৌরনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও আরবি বিষয়সমূহ নিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। অল্পদিনেই পাওয়া যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক মহকুমা শহরের কলেজগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ পরিকল্পনায় অংশ হিসেবে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে নবাবগঞ্জ কলেজ জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণের পর নবাবগঞ্জ কলেজের নাম হয় ‘নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ’। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে ৩টি বিষয়ে অনার্স খোলার মধ্য দিয়ে উন্মোচন ঘটে নতুন দিগন্তের। বর্তমানে ১৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে।
১৭/০৪/২০১৪ খ্রি. তারিখের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পত্রে স্নাতকোত্তর শেষ পর্ব শিক্ষা কার্যক্রমে ২০১১-২০১২ শিক্ষা বর্ষে বাংলায় সর্বোচ্চ ৮০ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯০ জন এবং হিসাববিজ্ঞানে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে মাস্টার্স কোর্সের সূচনা হয়। বর্তমানে ৪টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।
নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সৈয়দ মোঃ মোজাহারুল ইসলাম তরু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (১৯৪০-২০২২), মাতা তাহেরা ইসলাম (১৯৫০-২০১৬)। তিনি নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে বাংলায় সম্মান, ১৯৯৪ সালে মাস্টার্স, ১৯৯৯ সালে এমফিল ও ২০০২ সালে পি-এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৯৫ সালে নবাবগঞ্জ শাহ নেয়ামতুল্লাহ ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালে আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ৫ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ২০ এপ্রিল ২০২২ এবং ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ১৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের প্রজ্ঞাপনে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অদ্যবধি প্রফেসর ড. সৈয়দ মোঃ মোজাহারুল ইসলাম তরু অত্যন্ত সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.