চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনজিও ‘পল্লী সাহায্য সংস্থা’র বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়স্থ বেসরকারী এনজিও ‘পল্লী সাহায্য সংস্থা’র বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়ে প্রধান কার্যালয় হলেও জেলায় রয়েছে এর ১১টি শাখা কার্যালয়।

‘পল্লী সাহায্য সংস্থা’র গ্রাহকদের প্রায় ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার স্থিতি থাকলেও এনজিও’র মালিকরা পুরোপুরি অস্বীকার করছে এবং এঘটনায় প্রধান কার্যালয়সহ শাখা কার্যালয়ের অধিভুক্ত গ্রাহকরা চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। এলাকা চরম উত্তেজনাও বিরাজ করছে। ভূয়া একটি রেজিষ্ট্রেশন ব্যবহার করে সংস্থা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সেবামূলক কাজ শুরু করে। নিয়ম মোতাবেক কোন ঋণ কার্যক্রম চালানোর অনুমতি থাকলেও পুরোদমে শুরু করে ঋণ কার্যক্রম। আর ঋণ কার্যকমের জন্য প্রচুর অর্থের জোগান দিতে তফসিলী ব্যাংকের চেয়ে ২গুন বা ৩ গুন লাভের প্রলোভন দিয়ে সংস্থায় টাকা জমা রাখার ফাঁদ পাতে।

এ ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই মোটা অংকের টাকা জমা রাখে। দিনে দিনে এসব টাকার পরিমান হয়ে দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা। প্রায় ৪ বছর যাবত জয়েন্ট স্টকের ভূয়া রেজিষ্ট্রেশন নং জে.এস.সি.ঢা-এস-১২১৭২/১৫ ব্যবহার করে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল সংস্থাটি (পি.এস.এস)। সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের বেহুলা গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম, সর্জন গ্রামের মো. জামাল উদ্দিন, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের মো. শওকত আলী ও নাচোল উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মো. সেলিম রেজা এই ৪জন মিলে একসাথে শুরু করেন এই এনজিও ব্যবসা। মোটা অংকের এই টাকার উপর লোভের বশবর্তী হয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে গ্রাহকদের পুরো টাকাগুলোই অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। এসব টাকা গ্রাহক বা জনগণের নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।

এ ঘটনা জানাজানি হলে সকল গ্রাহকদের মাথায় বাজ পড়ে। তারা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিভিন্ন স্থানে ধরণা দিলেও কোন কাজ হয়নি। এব্যাপারে স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, সর্জন গ্রামের বজলুর রহমানের ৫ লক্ষ, মো. শামীম এর ৩ লক্ষসহ জেলার অনেক মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন পালানোর চেষ্টা করছে ‘পল্লী সাহায্য সংস্থা।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি, অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পল্লী সাহায্য সংস্থা’র প্রধান কার্যালয়ের সাইনবোর্ডটি দ্রুত সরিয়ে নেয়া হবে। তাহলে এতটাকা তিনি কোথায় পেলেন আর লাভের আসায় গ্রাহকদের রক্ষিত টাকাগুলোর কথা কেন অস্বীকার করছেন? এমন অভিযোগের কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইমলাম।
এদিকে, গত একমাসের মধ্যে জেলা থেকে দুটি এনজিও কোটি টাকারও বেশি অর্থ নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। তাদের মধ্যে বারঘরিয়ার ‘সিয়াম স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ এবং মহারাজপুরের ‘যমুনা পল্লী উন্নয়ন সংস্থা’। এদিকে, এনজিও দুটি পালিয়ে যাওয়ার পর শতশত গ্রাহককে পথে বসতে হয়েছে। সিয়াম ও যমুনা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার মত (পি.এস.এস) সংস্থাটিও অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যেতে পারে বলেও বহু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের মনে।

এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ বিটিসি নিউজকে জানান, সেচ্ছা সেবামুলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেলায় মোট ৪’শ ৭০টি ক্লাব/বেসরকারী সংস্থা/সমিতিকে রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। তবে সেবামুলক এসব প্রতিষ্ঠানগুলো কোন প্রকার বিনিয়োগ বা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমি সদ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগদান করেছি। খুব শিঘ্রই জেলার এমআরএ(মাইক্রো ক্রেডিট) ভুক্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.