ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে লোকসভা থেকে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। লোকসভায় ধ্বনিভোটে বহিস্কারের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময় অধিকাংশ বিরোধী দল লোকসভায় ছিল না। তারা ওয়াকআউট করে চলে যায়। তবে সব বিরোধী দল একসঙ্গে ভোট দিলেও মহুয়াকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল হত না। কারণ, লোকসভায় বিজেপি ও তার শরিকদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি লোকসভা সাংসদ হিসেবে পাওয়া আইডি ও পাসওয়ার্ড দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি-সহ অন্যদের দিয়েছেন। তারা মহুয়ার নামে প্রশ্ন জমা দিয়েছেন। যেটা নিয়মানুযায়ী তারা করতে পারেন না। তাছাড়া দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে তিনি অর্থ-সহ নানা সুযোগসুবিধা নিয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন মহুয়া। এথিক্স কমিটির রিপোর্টে তাই মহুয়াকে বহিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে।
এথিক্স কমিটির রিপোর্ট শুক্রবার লোকসভায় পেশ করা হয়। তারপর এই রিপোর্ট নিয়ে আধঘণ্টা আলোচনার পর মহুয়াকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পাস হয়।
লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর মহুয়া বলেছেন, ‘কোনো অর্থের লেনদেন হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। আমি লোকসভার নিয়মাবলী ভালো করে পড়েছি। সেখানে আইডি, পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যাবে না, এমন কোনো কথা বলা হয়নি। মোদী সরকার যদি মনে করে, এভাবে মুখ বন্ধ করতে পারলে তারা আদানির বিষয়টি থেকে বাঁচবে, তাহলে তারা ভুল করছে।’
মহুয়া যখন সাংবাদিকদের এই কথা বলছেন, তখন তার পিছনেই দাঁড়িয়ে সোনিয়া গান্ধী-সহ কংগ্রেস ও বিরোধী নেতানেত্রীরা। তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া জোটের যত রাজনৈতিক দল ছিল, সকলেই একজোট হয়ে মহুয়াকে সমর্থন করেছে এবং গান্ধীমূর্তির সামনে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।’
এবাবেই মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করার বিষয়টি বিজেপি বনাম বিরোধী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে এবং রাজনৈতিক চরিত্র পেয়ে গেছে।
মহুয়াকে বলতে দেওয়া হয়নি
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘তৃণমূলের পক্ষ থেকে মহুয়া লোকসভায় বলবেন। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে বলতে দেয়া উচিত।’ তখন স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘২০০৫ সালে ১০ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ক্যাশ ফর কোয়ারির অভিযোগ ওঠে। এথিক্স কমিটি রিপোর্ট দেয়। তখন লোকসভায় ওই সাংসদদের বলতে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কিন্তু তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, সাংসদরা কমিটির কাছে তাদের কথা বলেছেন। লোকসভায় আর তারা বলতে পারবেন না।’
ওম বিড়লা জানান, তিনি সাবেক স্পিকারের রুলিং অনুসরণ করছেন। এটাই সংসদের রীতি। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘মহুয়ার জবাব দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে। বলা হয়েছে, টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রমাণ কোথায়? কত টাকার লেনদেন হয়েছে?’
রিপোর্টে যা বলা হয়েছে
এথিক্স কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, মহুয়া গুরুতর অপরাধ করেছেন, তাকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তার বিরুদ্ধে আইনি তদন্ত করা উচিত। আর যে টাকার লেনদেন হয়েছে, তা খুঁজে বের করা উচিত।
অভিযোগ কী
বলা হয়েছে, মহুয়া তার সাংসদ হিসেবে লোকসভায় লগ ইন করার ক্রেডেন্সিয়াল দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন। দুবাই থেকে বহুবার লগ ইন করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে মহুয়ার নামে প্রশ্ন জমা পড়েছে। অভিযোগ, মহুয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য দুই কোটি টাকা পেয়েছেন। এই অভিযোগ মহুয়া বারবার অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ, মহুয়ার ১৪টি বিদেশ সফরের কোনো হিসাব নেই।
বিজেপি সাংসদ হীনা গাভিত লোকসভায় বলেছেন, ‘এপর্যন্ত ১৩জন সাংসদকে দুর্নীতির জন্য লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। হীরানন্দানির পাঁচটি ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্থ হয়েছে। মহুয়া লোকসভায় ৬১ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন। ৫০টি প্রশ্ন এই পাঁচ সেক্টর নিয়েই। ৪৭ বার দুবাই থেকে অ্যাকাউন্ট লগ ইন করা হয়েছে। ছয়বার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল থেকে লগ ইন করে প্রশ্ন দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘মহুয়া নিজেই বলেছেন, তিনি এই লগ ইন পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়েছেন। হীরানন্দানির হলফনামা এথিক্স কমিটির কাছে আছে। দিল্লি, দুবাই, বেঙ্গালুরু ও অ্যামেরিকা থেকে একইদিনে অ্যাকাউন্ট লগ ইন করা হয়েছে। যা গোপন রাখার কথা, তা  মহুয়া চারজনকে শেয়ার করছেন। মহুয়ার জন্য সব সংসদের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে।’
রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল তো বটেই, বিরোধী দলগুলি মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এরকম প্রতিহিংসার রাজনীতি কেন হবে? একটা নজির তৈরি করা হচ্ছে। আজ তো কলঙ্কের দিন।’
লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘কেন এত তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। শুক্রবার হলো লোকসভায় প্রাইভেটস মেম্বারস ডে। এই দিন অনেক সাংসদ নিজের ফিরে যান। মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক শত্রুতার জন্যই এরকম করা হচ্ছে।’
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, ‘কমিটি উপযুক্ত পদ্ধতিও অনুসরণ করেনি। আড়াই মিনিটে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মহুয়াকে নিজের কথা বলতে দেয়া হয়নি।’
কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘এর ফলে মহুয়া আরো ৫০ হাজার ভোট বেশি পাবেন।’
বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘শূর্পনখার জন্য মহাভারত হয়নি। নাম না করে তিনি মহুয়াকে শূর্পনখার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ভারতের সুরক্ষার সঙ্গে কেউ আপস করলে সেটা ভয়ংকর বিষয়। তাই আমরা শাস্তি চাই।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.