খুলনায় ডাঃ রাকিব হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ (ভিডিও)

খুলনা ব্যুরো: খুলনার চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ধিক্কার জানাই এই রাষ্ট্রকে এই রাষ্ট্রের সন্ত্রাস রুপী জনগন একজন ডাক্তারকে মানুষ মনে করেন না, ডাক্তার রাকিব এর পদমর্যাদা একজন ডিসি এসপির উপরে। একজন ডিসি এসপিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলে এতক্ষণ প্রশাসনকি বসে থাকতো ধিক্কার জানাই এই রাষ্ট্রকে, লজ্জা জানাই এই রাষ্ট্রকে, আমরা আর কিছু চাইনা উই ওয়ান্ট জাস্টিস আমরা এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।

রোগীর স্বজনদের প্রহারে নিহত বাগেরহাট ম্যাটস এর অধ্যক্ষ ডা. মোঃ আব্দুর রকিব খাঁনে হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে খুলনার চিকিৎসকরা বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চিকিৎসকদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আজ বুধবার (১৭ জুন) দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে মহানগরীর ৭ রাস্তার মোড়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ) ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ) এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার সভাপতি ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ, বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. গাজী মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সওকাত আলী লস্করসহ অন্যান্য চিকিৎসক নেতারা।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, রাইসা ক্লিনিকের পাশেই গল্লামারী পুলিশ ফাঁড়ি, কিন্তু ডা. রকিবকে হামলার সময় পুলিশ এগিয়ে আসেনি। এমনকি তারা এ ব্যাপারে থানায় জিডিও নেয়নি। মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। মামলাও হয়নি।
‘কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন হাসপাতালে এর ফলে চিকিৎসকরা ঝুঁকির মধ্যে থাকছেন। তাদের ওপর হামলা যেন একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা বা ডাক্তার-নার্সদের ওপর চড়াও হওয়া একটা হুজুগে পরিণত হয়েছে। বিষয়টা যেন আরও বেদনাদায়ক হয়, যখন হাসপাতাল বা ক্লিনিক চত্বরে একজন চিকিৎসক দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়ে পড়েন। বিচারহীনতা ও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে রকিবের মতো গরীবের ডাক্তারকে আজ প্রাণ দিতে হয়েছে।’
বক্তারা ড. রকিবের ওপর হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের দ্রুত আটক করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। তা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চিকিৎসকদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন সিজারের জন্য নগরীর মোহাম্মদ নগরের পল্লবী সড়কের বাসিন্দা আবুল আলীর স্ত্রী শিউলী বেগমকে রাইসা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় তার অপারেশন হয়। অপারেশনের পর প্রথম দিকে বাচ্চা ও মা দুজনই সুস্থ ছিলেন। কিন্তু পরে শিউলীর রক্তক্ষরণ শুরু হলে ১৫ জুন সকালে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও চিকিৎসকরা রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ১৫ জুন রাতে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান শিউলী বেগম।
পরবর্তী সময়ে ওই ঘটনার জেরে ১৫ জুন রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে শিউলীর রাইসা ক্লিনিকের মালিক ডা. রকিবকে লাথি, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করেন তার স্বজনরা। এতে রকিবের মাথার পেছনে জখম হয়। পড়ে তাকে আহত অবস্থায় প্রথমে গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় শেখ আবু নাসের হাসপাতালে। সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রকিবের মৃত্যু হয়।
১৫ জুন রাতে রাইসা ক্লিনিকের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিহত শিউলীর স্বজন কুদ্দুস, আরিফ, সবুরসহ কয়েক মহিলা হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তাদেরকেই হামলাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত চিকিৎসক বাগেরহাট মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলেরও (ম্যাটস) অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া সিনিয়র এ চিকিৎসক বিসিএস স্বাস্থ্য প্রশাসনে পরিচালক পদমর্যাদায় চাকুরি করতেন তিনি। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার আজীবন সদস্য ছিলেন ডা. রকিব।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.