এবার বিক্ষোভে অক্সফোর্ড-কেমব্রিজের শিক্ষার্থীরা

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন তারা। মার্কিন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সংহতি জানিয়ে এবার বিক্ষোভ শুরু করেছেন ‍ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত প্রায় সাত মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপ্যতায় সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে এরই মধ্যে গাজা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। লক্ষাধিক নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়েছে লাখ লাখ। এরপরও হামলা অব্যাহত রয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিধ্যালয়ে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন চলছে। আন্দোলন দমনে বিশ্ববিদ্যালগুলোর ক্যাম্পাসে সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে মার্কিন পুলিশ। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি বহিষ্কারও করা হচ্ছে।
এরপরও পিছু হটছে না শিক্ষার্থীরা। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন। এখন পর্যন্ত দেশটির ৫০টিরও বেশি আন্দোলনের খবরও পাওয়া গেছে। এই আন্দোলন এখন আর শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই সীমাবদ্ধে নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
এবার ফিলিস্তিনিদের সংহতি জানিয়ে পথে নেমেছেন ব্রিটেনে ব্রিশ্বের প্রথম সারির দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। বিট্রিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিট রিভারস মিউজিয়ামের বাইরে অসংখ্য তাঁবু টানানো হয়েছে। যতই সময় গড়াচ্ছে, তাঁবুর সংখ্যা ততই বাড়ছে। 
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজের লনেও তাঁবু বসিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, তাদের এই বিক্ষোভের কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গাজায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় ইসরাইলকে সমর্থন করছে।
এদিকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ আয়োজকরা এক্স-এ এক ভিডিও পোস্ট করে বলেছে, তাদের সদস্যরা তাঁবু, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় যখন গাজায় ইসরাইলের ফিলিস্তিনি গণহত্যাকে সমর্থন করছে, তখন আমরা অলস বসে থাকব না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লনেও তাঁবু টানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ছাত্রনেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের কাছে ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি তালিকা একটি বোর্ডে টানিয়ে দিয়েছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে, ইসরাইলি গণহত্যা, বর্ণবাদ ও দখলদারিত্ব রুখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের উৎস ও প্রাপ্ত অর্থের তথ্য প্রকাশ করতে হবে, বার্কলে’র সাথে ব্যাংকিং সম্পর্কিত লেনদেন বন্ধ করতে হবে, গাজার শিক্ষা পুনর্গঠনে সহায়তা করতে হবে। 
এছাড়া শিক্ষার্থীরা একটি বিবৃতিতে প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সহিংসতা, দখলদারিত্ব এবং ধ্বংসাত্মক ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে সক্রিয় আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধ, সেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের বিভিন্ন দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা, তবে যে দাবিটি তারা সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে সামনে আনছেন, সেটি হলো ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যাবতীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা।
দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার জন্য অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পাস চত্বরেই অবস্থান নিয়েছেন তারা।
গত মার্চের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথম আন্দোলনে শুরু করেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন।
শিক্ষার্থীদের টানা কয়েক সপ্তাহ আন্দোলন চালিয়ে নিতে দিলেও এক পর্যায়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আন্দোলন দমনে পুলিশের হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ জানায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ।
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রাতে প্রথম কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেই রাতে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গও করে দেয় পুলিশ।
এরপর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যের মোট ৪৩টি বিশ্ববিধ্যালয়ে ৫৬বার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসব অভিযান থেকে প্রায় ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.