পোস্টাল একাডেমীর এক দপ্তরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় টাকা আত্মসার্তের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: পোস্টাল একাডেমীর দাপ্তরী জামাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে টাকা আত্মসার্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে তিনি জামিন পান এবং পোস্টাল একাডেমী থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু টাকা দেয়ার শর্তে তিনি জামিন পেলেও টাকা দিচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী রজিম বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় জামাদুল ইসলাম চেক ও স্ট্যাম্পে লিখিত অবস্থায় তার কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ধার নেন। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার সময় পার হয়ে গেলেও জামাদুল ইসলাম টাকা ফেরত না দিয়ে তাকে হুমকি দেন।
এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গত ৬ জুলাই বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বোয়ালিয়া থানায় মামলা নং-০৩। তারপর টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে জামিন পান জামাদুল ইসলাম ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত জামাদুল ইসলাম তাকে কোন টাকা ফেরত দেননি।
বোয়ালিয়া থানার মামলা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পাঠানপাড়া এলাকার রজিমের সঙ্গে পূর্ব পরিচয় ছিলো জামাদুল ইসলামের।
জামাদুল ইসলামের বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদীঘী থানার দমদম এলাকায়। গত ২০১৮ সালের ৬ জুন সকাল ১১টার সময় পাঠানপাড়াস্থ রজিমের বাড়িতে মেয়ের বিয়ের কথা বলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, রাজশাহী শাখার চেক নং-অদখ/১০ নং-৬১৬৬৯৮৪ বিবাদী জামাদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ফাঁকা চেক দিয়ে নগদ ৯৪ হাজার টাকা, জনতা ব্যাংক নওদাপাড়া শাখা রাজশাহীর চেক নং- ঝই-১০/ঋই ১৮৯৩২৭০ বিবাদী জামাদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ফাঁকা চেক দিয়ে নগদ ২০হাজার টাকা ও ৩০০টাকার স্ট্যাম্পের ওপর স্বাক্ষর করে নগদ ২লাখ ৫৫হাজার টাকা ঋণ নেয় এবং বিবাদী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখে ঋণ পরিশোধ করবেন বলে উল্লেখ করেন।
কিন্তু বিবাদীর ঋণ পরিশোধের সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও বিবাদীকে পাওনা সর্বমোট ৩লাখ ৬১ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বললে আজ দিবো কাল দিবো বলে কালক্ষেপন করতে থাকে। চলতি বছরের ০৬ মে বিবাদী রজিমের বাড়িতে আসলে তার কাছে টাকা চেলে রজিমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে রজিম বাদি হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ৫হাজার টাকা বন্ডে পরবর্তী ধার্য তারিখ আগামী ১০ নভেম্বরের আগে টাকা পরিশোধ করার শর্তে জামিন দেন।
এ মামলার ঘটনায় গত ১৫জুলাই জামাদুল ইসলামকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। পোস্টাল একাডেমীর স্মারক নম্বর-১৪.৩১.৮১৯০.৭১২.১৮.০০৫.৮৯ এ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় উপর্যুক্ত বিষয়ে ১২/০৭/২০২০ তারিখে প্রাপ্ত দাপ্তরিক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে জামাদুল ইসলাম, দপ্তরী পোস্টাল একাডেমী, রাজশাহী এর বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা রজু করা হয় যার নম্বর-০৩/৪১৪, তারিখ ০৬.০৭.২০২০ খ্রি: ।
উক্ত মামলার বরাতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, রজশাহী অভিযুক্ত তারিখে কর্মচারীকে বিগত ০৯.০৭.২০২০ খ্রি: জামিন আদেশ প্রদান করেন।
সুতরাং বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস পার্ট ১ এর ৭৩ বিধির ২নং অনুসারে কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হলো।
সাময়িক বরখাস্তকালীন কর্মচারী বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। এই আদেশ ০৯ জুলাই হইতে কার্যকর হইবে।
পোস্টাল একাডেমী ঘুরে জানা গেছে, জামাদুল ইসলাম বাংলাদেশ পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়ন পোস্টাল একাডেমী জেলা শাখার সম্পাদক পদে রয়েছেন। জামাদুল ইসলামের নামে চাকরি দেয়ার নামে টাকা আত্মসার্তের অভিযোগ সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নেত্রকনা বারহাট্টা এলাকার পদ্মা ডায়গনস্টেক সেন্টারের পরিচালক লুৎফর রহমান চলতিবছরের ৪ মে রাজশাহী পোস্টাল একাডেমীর প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দিন বরাবর জামাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১২লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, আপনার অধীনস্ত কর্মচারী জামাদুল ইসলাম, এমএলএসএস, পোস্টাল একাডেমী, রাজশাহী আউটসোসিং এ চাকরি দেওয়ার জন্য আমাদেরকে বিভিন্নভাবে আশ্বাস প্রদান করে এবং যততাড়াতাড়ি সম্ভব টাকা দিলে ০১ সপ্তার মধ্যে চাকুরি হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের ১০জন অর্থাৎ প্রতি জনের কাছ থেকে ১লাখ ২০হাজার টাকা করে সর্বমোট ১২লাখ টাকা নিয়ে নেয় এবং আমাদেরকে বলে ২০১৮ সালের অক্টোবরের মধ্যে আমাদের চাকুরি হয়ে যাবে।
কিন্তু অতিব দু:খের বিষয় আজ প্রায় ৭মাস পার হয়ে গেলেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না, তাই আমাদের আকুল আবেদন গরীব মানুষের টাকাগুলি উদ্ধার করে দিতে মহোদয়ের সমীপে আমাদের বিনীত নিবেদন।
যে ১০জনের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় তারা হলেন, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানাধীন বাটগাও গ্রামের আলীম উদ্দিন এর কন্যা পপি আক্তার, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানাধীন চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত: শাহ আলম মজুমদারের কন্যা ফারিয়া মজুমদার, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানাধীন নয়াপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের কন্যা নিলুফা আক্তার, নেত্রকোনা পূর্বধলা থানাধীন মইলাকান্দা গ্রামের আজিজুল হকের পুত্র জাহিদুল হাসান রাজিব, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন মাহমদপুর গ্রামের মেরাজ মিয়ার কন্যা সোমা আক্তার, নেত্রকোনার মাহমুদপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন এর কন্যা লিজা আক্তার, নেত্রকোনা হরিপুরের কান্দা গ্রামের কাজিম উদ্দিনের পুত্র মাহমুদ হাসান, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা এলাকার আমঘাইল এলাকার জালাল উদ্দিনের পুত্র হিমেল মিয়া, একই এলাকার আলতাফুর রহমানের পুত্র আল-মামুন ও ওয়াজিজ এর পুত্র কাইরুম তালুকদার।
এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে এ ১০জনের পক্ষে আবেদনকারী নেত্রকনা বারহাট্টা এলাকার পদ্মা ডায়গনস্টেক সেন্টারের পরিচালক লুৎফর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার এক আত্মীয় পোস্টাল একাডেমীতে চাকরি করেন। তিনি মধ্যস্থতা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত আমরা টাকা ফেরত পায়নি।
এ ব্যাপারে পোস্টাল একাডেমীর দাপ্তরী জামাদুল ইসলামের সঙ্গে তার মোবাইল নম্বর যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং কল দিলে ফোন কেটে দেন। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যপারে পোস্টাল একাডেমীর ভাইস-প্রিন্সপাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি যেগুলো অভিযোগ পেয়েছি সেগুলো প্রিন্সিপাল বরাবর প্রেরণ করেছি।
এ ব্যাপারে পোস্টাল একাডেমীর প্রিন্সিপাল মো: শহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জামাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে টাকা আর্ত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন এসব বিষয়ে ইতিমধ্যে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতে সেটি ফায়সালা হবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আমাদের যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে নিচ্ছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আল্ ফাত্তা সামাদ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.