নওগাঁ শহরের প্রবেশ দ্বারে মদের দোকান

নওগাঁ প্রতিনিধি: সারাদেশের ন্যায় নওগাঁতেও চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারত থেকে চোরাই পথে মাদক প্রবেশ করে। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। অপরদিকে শহরের প্রবেশ মুখে প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকার অনুমোদিত দেশীয় বাংলা মদ (পরিতোষের মদ) নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। মদের দোকানে শুধু পারমিটধারী বা লাইসেন্সধারীদের কাছে নির্ধারিত পরিমাণে মদ বিক্রির বিধান থাকলেও এখানে তা মানা হয় না। পারমিটধারী না হলেও যে কেউ এখানে মদ কিনে খেতে পারে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই মদ বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় পরিতোষ কুমার সাহা নামে একজন বৈধ দেশীয় বাংলা মদ বিক্রেতা রয়েছে। আর পারমিটধারী মদের ক্রেতা রয়েছে ৯৩৫ জন। এরমধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের রয়েছে প্রায় ২০০ জন। বাকীগুলো অন্য সম্প্রদায়ের। একজন পারমিটধারী মাসে ৭ ইউনিট (প্রায় ১০ লিটার) মদ খেতে বা বহন করতে পারবেন।

শহরে প্রবেশ মুখ পার-নওগাঁ ঢাকা বাস স্ট্যান্ডে ‘ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড ষ্টোরেজ লি:’ এর ভিতরে পরিতোষ কুমার সাহার দেশীয় বাংলা মদের দোকান। দোকানে শুধু পারমিটধারীদের কাছে নির্ধারিত পরিমাণে মদ বিক্রির বিধান থাকলেও এখানে তা মানা হয় না। পারমিটধারী না হলেও যে কেউ অনায়াসে এখান থেকে মদ কিনে খেতে পারে। বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই নাকি এভাবে খোলাবাজারে এক রকম প্রকাশ্যেই মদ বিক্রি করা হয়। কার্টনে প্যাকেট করে রাতের আঁধারে গ্রামাঞ্চলের ক্রেতাদের কাছে পাইকারী মদ বিক্রি করা হয়ে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে মদ গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করে থাকেন। এতে গ্রামের মানুষরা হাতের নাগালেই দেশীয় বাংলা মদ পেয়ে দেদারছে মাদক সেবন করছেন। উড়তি বয়সী যুবকরাও অনয়াসের মদ খেতে পারছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। আবার অনেকেই নামমাত্র পারমিটধারী হয়ে এক মাসের মদ একবারে উত্তোলন করে বেশি লাভের আশায় গ্রামে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে মদের দোকান ‘ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড ষ্টোরেজ লি:’ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় উন্মুক্ত ভাবে মদসেবীরা ভেরতের গিয়ে মদ পান করে ও কিনে নিয়ে বেরিয়ে আসছেন। ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থেকে মদ পান ও বিক্রি করার নিয়মের বিষয়ে এ প্রতিবেদক তথ্য নিয়ে ফিরে আসার পর ‘ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড ষ্টোরেজ লি:’ এলাকার চিত্র পাল্টে যায়। সেদিন আবারও বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায় ‘ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড ষ্টোরেজ লি:’ এর দরজার দুই পাশে দুইজন প্রহরী চেয়ারে বসে আছেন। পারমিট ছাড়া কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সন্ধ্যা পর্যন্ত দরজার সামেন ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। যাদের পারমিট নাই তারা পারমিটধারীদের কিছু টাকা বেশি দিয়ে ভিতর থেকে মদ কিনে নিয়ে আসাচ্ছেন। পরদিন খোঁজ নিয়ে যায়, মদ আবারও আগের মতোই নিয়মবর্হিভূত ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে।

ট্রাক চালকের সহযোগী রুস্তম আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার মদ পানের কোন পারমিট নাই। এতোদিন অনায়াসে মদের দোকানে গিয়ে মদ কিনে খেয়েছি। কিন্তু বুধবার (২ অক্টোবর) হঠাৎ করেই ভেতরে যাওয়া বন্ধ এবং পারমিটধারী ছাড়া কোন মদ বিক্রি করা হবেনা বলে জানিয়ে দেয়া হয়। পরে এক পারমিটধারীকে ২০০ টাকা দিলে তিনি ভিতর থেকে কিনে নিয়ে আসালেন।

বয়জ্যেষ্ঠ রংয়ের মিস্ত্রী টিপু বিটিসি নিউজকে বলেন, বুধবার সকালেই পারমিট ছাড়াই মদ খেয়েছি। অথচ দুপুর পর আর পারমিটধারী ছাড়া মদ বিক্রি হবেনা বলে তারা জানায়। আকার ভেদে ২৫০ মিলির বোতল ১১০ টাকা, ১৫০ টাকা ও ২০০ টাকা দাম। এছাড়া ১ লিটারের ভাল টার দাম ৫০০ টাকা। ২৫০ মিলির বোতল এক পারমিটধারীকে ১১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে খেতে হলো।

শহরের ভবানিপুর গ্রামের ভ্যান চালক ইদ্রিস প্রামানিক বিটিসি নিউজকে বলেন, তিনি পারমিটধারী এবং দীর্ঘদিন থেকে মদ পান করেন। প্রশাসন যখন চাপ দেয় তখন পারমিট না দেখালে কাউকে মদ দেয়া হয়না। এছাড়া অন্যান্য সময় অনায়াসে যে কেউ মদ কিনে খেতে পারেন।

দীর্ঘদিন থেকে মদের দোকানি পরিতোষ কুমার সাহা দেশের বাহিরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে, দোকান দেখভাল করেন পরিতোষ কুমার সাহার ছেলে সুমন কুমার সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলেও গত ৬দিন থেকে তার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নওগাঁ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম দিদারুল আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, ওই দেশীর মদের দোকানে আমরা নিয়মিত তদারকি করে থাকি। পারমিটধারীদের কাছে কার্ড দেখে মদ বিক্রি এবং খাতায় তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। সরকারকে রাজস্ব জমা দিয়ে বগুড়ার সান্তাহার পণ্যগার থেকে মদ উত্তোলন করতে পারবেন। যে পরিমানই মদ উত্তোলন করা হোক না কেন, পারমিটধারীদের কাছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিক্রি করতে পারবেন না। তিনি আরো বলেন, কার্ড ছাড়া মদ বিক্রি হয়না বা কোন নিয়ম নাই। কার্ড ছাড়া মদ বিক্রি করা হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম বিটিসি নিউজকে বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদকের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সহযোগীদের সাথে কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত মাদক সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। তারপর আরো সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যহত আছে।

এছাড়া শহরের প্রবেশ মুখে দেশীয় মদের দোকানের বিষয়ে অবগত রয়েছি। আমার মনে হয়, এটা অচিরেই নিয়ন্ত্রন করতে পারব।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.