নিজস্বপ্রতিবেদক: শেষ পর্যন্ত রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ডুবে গেল নগরীর শ্যামপুরে অবস্থিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (পানি শোধনাগার) ভাসমান পল্টন। গত রোববার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে এই পল্টনটি পদ্মা নদীতে ডুবে গেছে। সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলা, গাফেলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে পানি শোধনাগার প্লাণ্টটি পদ্মাগর্ভে ডুবে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
আজ শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর কাটাখালি থানার শ্যামপুরে অবস্থিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (পানি শোধনাগার) ভাসমান পল্টনটি পদ্মা নদীতে ডুবে গেছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট অফিসের প্রহরায় থাকতে কোন লোক দেখা যায়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী মালামাল হলেও পল্টনটি ডুবে যাওয়ার পরও সরেজমিনে তেমন কোন কর্মকর্তা আসেনা। তবে (২২ আগস্ট) রোববার দিবাগত রাতে ডুবে যাওযার পরের দিন দুইজন ইঞ্জিনিয়র নদীর পাড়ে এসে দেখে গেছে। এরপর ৫দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন কর্মচারী বিটিসি নিউজকে জানান, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের একটি পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরে মাছ চাষের লক্ষ্যে মাছের পোনা ছাড়ে চারজন কর্মচারী। এ নিয়ে গত (২১ আগস্ট) ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুব হোসেন ও মো. আব্দুর রহিমের সাথে কর্মচারীদের সাথে মাছের ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষ কর্মচারীদের অন্যত্র পানির পাম্পে বদলি করেন ওই দুই ইঞ্জিনিয়ার। পরে চারজন অদক্ষ কর্মচারীকে ভাসমান পল্টনে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর ২২ আগস্ট দিবাগত রাত ১০টায় পল্টনটি ডুবে যায়। বিষয়টি কর্মচারীরা প্রকৌশলী মো. পারভেজ মামুদকে অবগত করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সূত্র জানায়, রাজশাহী নগরীতে ১১০টি পানির পাম্প রয়েছে। সেখানে কর্মচারী রয়েছে ২০৬ জন। এরা সবাই অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত। এসব কর্মচারীর মধ্যে সর্বোচ্চ চাকরীর বয়স ২২ ও ২৬ বছর। এই প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মচারীর প্রয়োজন প্রায় ৬ হাজার। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনবল নিয়োগ থেকে বিরত আছেন এমনই অভিযোগ অস্থায়ী কর্মচারীদের। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী- ১০ বছরের উপরে যাদের চাকরীর বয়স হয়েছে তাদের চাকরী স্থায়ী হওয়া উচিত। মেয়র দপ্তর, এমডি দপ্তর, জেলা প্রশাসকসহ পানি সম্পদ মন্ত্রালয়েও চিঠি দিয়েছেন কর্মচারীরা। এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে একটি মামলাও করেছেন শ্রমিক নেতারা। রায়ও পেয়েছেন তারা। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে নিজ সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি।
জানতে চাইলে সাব এসিটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুর রহিম মুঠো ফোনে বিটিসি নিউজকে জানান, গত ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় নদীতে ঢেউ ওঠার জন্য পল্টনটি ঢুবে গেছে। খুলনা থেকে লোক ডাকা হয়েছে। তারা এসে পল্টন উদ্ধারের কাজ শুরু করবে। মাছ চাষকে কেন্দ্র করে কর্মচারীদের সাথে মনোমালিন্য সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে মাছ চাষ হয় না। তিনি আরও বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব হোসেন স্যার ২০১৩ সাল থেকে এখানে আছেন। তার সাথে কথা বলুন। তিনি ভাল বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকোশলী মো. মাহবুব হোসেন মুঠো ফোনে বিটিসি নিউজকে জানান, মাছ চাষ সংক্রান্ত বিষয়টি অযৌক্তিক। আর পল্টন উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করার জন্য ঢাকা থেকে লোক ডাকা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পল্টন উদ্ধার করা সম্ভব হবে। পানি শোধনাগারের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজশাহী নগরীতে পানির ঘাটতি হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরীতে পানির কোন ঘাটতি নেই। বিকল্প পাম্প দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.