BTC NEWS (বাংলাদেশ)কে একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন নায়ক-বিধায়ক চিরঞ্জিত (ভিডিও)

(BTC NEWS (বাংলাদেশ)কে একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন নায়ক-বিধায়ক চিরঞ্জিত)

কলকাতাহাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: ‘দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগেই বাংলা ছবির মুশকিল আসান’ একদিকে তিনি রোম্যান্টিক হিম্যান। অন্যদিকে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নায়ক-বিধায়ক। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর অভিনীত সুপার-ডুপারহিট ছবি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ৯০এর দশকে অসাধারণ ভূমিকা নিয়েছিল দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে। তিনি চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। বাংলা ছবির এক স্বতন্ত্র ঘরানার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক।
কোভিড বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাঁর সামনে একরাশ প্রশ্নের ডালি সাজিয়ে দিয়েছেন BTC NEWS (বাংলাদেশ) এর ভারত প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ
বিটিসি নিউজ: আপনার সাফল্যের নেপথ্যে আসল কারণটা কী- ভাসা ভাসা চোখের রোম্যান্টিক দৃষ্টি, নায়ক সুলভ দীর্ঘ হিম্যান চেহারা, নাকি স্বতন্ত্র অভিনয় প্রতিভা?
চিরঞ্জিত: আসল ব্যাপারটা হলো কনফিডেন্স। ওটাই আমার মূলমন্ত্র। আত্মবিশ্বাস থাকলে অমিতাভ বচ্চন হওয়া যায়। মাথা উঁচু করে টিকে থাকা যায়। আবার আত্মবিশ্বাস না থাকলে অনন্য প্রতিভাকেও অনেক সময় হারিয়ে যেতে হয়। তাই নিজের সামান্য ভুলভ্রান্তি নিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসার কোনও মানেই হয় না। আগে আমি কী এক্সপ্রেশন দিলে মেয়েরা আপ্লুত হয়ে পড়তেন,আর এখন আদৌ  অভিভূত হন কী হন না –এসব নিয়ে খুঁতখুঁত করলে আমাকে তো থমকে দাঁড়াতে হবে। তাই আমার বিশ্বাস, কনফিডেন্সটাই শেষ কথা। এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় আত্মবিশ্বাসই। কনফিডেন্স মানে স্টার।
প্র: অন্তত ২০০ ছবিতে আপনি অভিনয় করছেন। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ থেকে শুরু করে ‘রক্ত নদীর ধারা’, ‘ প্রতীক’, ‘ মর্যাদা’, ‘ ফিরিয়ে দাও’, ‘ অমরকন্টক’, ‘পাপী’, ‘ প্রতিঘাত’ – অধিকাংশই বক্স অফিস হিট। আপনি ‘অ্যাকশন কিং’। কিন্তু আপনার অভিনীত কোন বাংলা ছবি বাণিজ্যিক দিক দিয়ে সবচেয়ে সফল বলে আপনি মনে করেন?
উ: অবশ্যই ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। এমন হিট ছবি বোধহয় বাংলায় আর হবেই না। বাংলার ইন্ডাস্ট্রিতে এ নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত। আসলে এই ছবির পথ চলা শুরু বাংলাদেশে, ১৯৮৯সালে। নায়কের ভূমিকায় ইলিয়াস কাঞ্চন এবং নায়িকার ভূমিকায় অঞ্জু ঘোষ। তোজাম্মেল হক বকুল এবং মতিউর রহমান পানুর প্রযোজনা-নির্দেশনায় এই ছবি ছুঁয়ে গিয়েছিল বাঙালির হৃদয়কে। একটা ইতিহাস হয়ে গিয়েছিল। তাই এপার বাংলা পশ্চিমবঙ্গেও উদ্যোগ নেওয়া হলো এই ছবি নতুন করে বানানোর। পরিচালক, নায়িকা, অনেক শিল্পী, কলাকুশলী এলেন বাংলাদেশ থেকেই। দিলদার নামে একজন খুব ভালো কমেডিয়ান এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে। নায়িকা অঞ্জু ঘোষের বিপরীতে নায়কের ভূমিকায় নির্বাচিত করা হলো আমাকে, চিরঞ্জিতকে। খুব আনন্দ করে মন দিয়ে অভিনয়টা করেছিলাম আমি। ঢেলে দিয়েছিলাম সবকিছু। ছবি মুক্তি পাওয়ার পরে এপারের অজস্র হলে মানুষের সে কী উন্মাদনা! মাসের পর মাস একটানা সফলভাবে চলেছিল এই ছবি। ভিড় সামলানোই দায়। সীমান্তের ওপার থেকেও যখন আমার অভিনয় নিয়ে ভেসে এলো প্রশংসা,কী ভালো যে লেগেছিল! উপলব্ধি করলাম, দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই ‘বেদের মেয়ে জোসনা’।
প্র: বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে আর কোনও ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে কি আপনার?
উ: নিশ্চয়ই। বিশিষ্ট অভিনেত্রী ববিতার বোন চম্পা নায়িকার ভূমিকায় কাজ করেছেন আমার সঙ্গে। ছবিটার নাম ছিল সম্ভবত ‘মস্তান’। সম্প্রতি জয়া এহসান আর আমি কাজ করলাম ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ ছবিতে। ওপারের অত্যন্ত প্রতিভাবান নায়ক ফিরদৌসের এপারে প্রথম ছবি ‘মাস্টারমশাই’, আমাকে কেন্দ্র করেই। মানে, ছবির মূল চরিত্র মাস্টারমশাইয়ের ভূমিকায় ছিলাম আমিই। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জিও। এছাড়া আরও কিছু ছবিতে বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন আমার সঙ্গে। তাঁদের অভিনয় এবং ব্যবহার মুগ্ধ করেছে আমাকে।
প্র: বাংলাদেশে গিয়েছেন কোনও দিন ?
উ: না, ইংল্যান্ড-আমেরিকা ঘুরে বেড়িয়েছি, অথচ আমার পাশের  দেশ বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠে নি। কত গল্প, কত প্রশংসা শুনেছি বাংলাদেশের আতিথেয়তার। বিখ্যাত আতিথেয়তা! কিন্তু আমিই তার স্বাদ পাইনি এখনও। আলমগির,রুণা লায়লার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল আমেরিকায়। বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন ওঁরা। অঞ্জু ঘোষ তো বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ নায়ক হিসেবে আমাকে নাকি এতটাই ভালোবাসেন যে আমি ওখানে গেলে সোনার সিংহাসন পেতে দেবেন তাঁরা। তবুও যাওয়া হয়নি। খুব ইচ্ছে, ওদেশে গিয়ে ববিতার সঙ্গে দেখা করবো। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে অন্তত তিনবার পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ সফরের। কিন্তু ভেতর থেকে কী যেন একটা বাধা বারবার আমাকে আটকে দেয়। আমার ইচ্ছে আর পূরণ হয় না।
প্র: বাংলাদেশের কোন কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাজ আপনাকে মুগ্ধ করে?
উ: অনেকেই আমার প্রিয়। তবে মোশারফ করিমকে আমার খুব ভালো লাগে। বড়ো পর্দা, ছোটো পর্দা- দু’টোতেই দারুন পপুলার। এপারে এসেও ছবি করেছেন, ‘ ডিকশনারি’। এছাড়া সুবর্ণা মুস্তাফা, প্রাক্তন মন্ত্রী নূর সাহেবের অভিনয়ও ভালো লাগে। গেলে দেখা করার ইচ্ছে আছে। মঞ্চেও অনেক প্রতিভার প্রতিফলন দেখা  যায় বাংলাদেশে। হুমায়ুন আহমেদের লেখার খুব ভক্ত আমি। একবার তাঁর একটা গল্প অবলম্বনে নাটক বা সিরিয়াল তৈরির ইচ্ছে ছিল আমাদের। অনুমতি চেয়ে চিঠিও লিখেছিলাম।
প্র: ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় ছবির সাফল্য নিয়ে কি আপনি আশাবাদী?
উ: নিশ্চয়ই আশাবাদী। কিন্তু আমি গ্রাউন্ড রিয়েলিটিতে বিশ্বাসী। বাণিজ্যিক সাফল্য না পেলে শুধুমাত্র অ্যাওয়ার্ডের আশায় ছবি তৈরি করে কী লাভ? কতদিনই বা এভাবে টাকা ঢেলে টানা সম্ভব? তাই বাণিজ্যিক সাফল্যের দিকে অবশ্যই বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্র: বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
উ: এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আকাশে এখন অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। বাজার হারাচ্ছে বাংলা ছবি। সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে অত্যন্ত আশঙ্কাজনকভাবে। কারণ, হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রবণতা কমতে শুরু করেছে অনেকদিন আগেই। এর ওপরে আচমকাই বিশ্বজুড়ে কোভিড-সন্ত্রাস। বাংলা ছবি বাঁচবে কীভাবে? এই প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের ঠিকানা কী হবে? কলাকুশলী এবং ইন্ডাস্ট্রির ওপরে নির্ভরশীল অজস্র মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন?
হ্যাঁ, এই পরিস্থিতিতে মুক্তির পথ দেখাতে পারে শুধুমাত্র ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ। দু’দেশের যৌথ প্রযোজনায় সফল বাণিজ্যিক ছবি তৈরি হলেই মুশকিল আসান! ঘুরে দাঁড়াবে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর পক্ষ থেকে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ চিরঞ্জিতদা।
চিরঞ্জিত – বিটিসি নিউজের জন্যও রইলো আমার শুভেচ্ছা। ইচ্ছে ছিল ক্যামেরার সামনে সৌম্য সিংহর মুখোমুখি হয়ে আরও অন্তরঙ্গ আলোচনার। কিন্তু কোভিড বিধির জন্য তা সম্ভব হলো না। ওঁর কথায় নিজেই ভিডিও করে পাঠিয়ে দিলাম আপনাদের জন্য। ইচ্ছে রইলো, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হবো আমি আর সৌম্য। ভালোবাসা রইলো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতাহাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.