নাটোর প্রতিনিধি: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১মাস কয়েক দিন বাকী। নির্বাচনকে ঘিরে নাটোরের ৪টি আসনে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। পূর্ব থেকেই নাটোর বিএনপির মজবুত খাঁটি হিসেবে বেশ পরিচিত। সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যান্ত মজবুত।
১৯৯১ এর নির্বাচনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪টি আসনের মধ্য একটি আসন পায়। পরে উপনির্বাচনে আরও একটি আসন বিএনপির দখলে যায়। ২০০১ সালের সপ্তম নির্বাচনে বিএনপি ৪টি আসনে জয়লাভ করে। অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে তিনটি আসন পায় বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি একটিতে জয়লাভ করেন।
এরপর নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের আমলে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৩ নির্বাচনে সবকয়টি আসন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। বর্তমানে বিএনপি আবারো শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে।
নাটোরের সব আসনে বিএনপি জয়লাভে মরিয়া হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীরা প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পিছিয়ে নেই জামায়াতও, তারাও নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। এনসিপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের মাঠে তেমন ভাবে গণসংযোগে দেখা যায়নি।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে মানেই বিএনপির ধানের শীষের ঘাটি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনটি বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এ আসনে পর পর চারটি সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন (রাকসু) সাবেক ভিপি ফজলুল রহমান পটল।
এরপর ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে ফজলুল রহমান পটলকে হারিয়ে জাতীয় পার্ঠির নেতা আবু তালহা জয়লাভ করে। ২০১৪ সাল ২০২৪ পর্যন্ত এ আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে চলে যায়।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম ফজলুল রহমান পটলের মেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী, মানবাধিকার কমিটি ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য এবং নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল।
এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী আব্দুল আহাদ, এবি পার্টির মোকাররেবুর রহমান নাসিম রয়েছেন। তবে আসনে জাতীয় নাগরিক পাটি(এনসিপি) এখনো কোন প্রার্থী ঘোষণা করেননি। বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা নিয়মিত নির্বাচনী গণসংযোগ করলেও অন্যদলের প্রার্থীদের তেমন মাঠে দেখা যায়নি।
নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) জেলার রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে এ আসনটি বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির ইতিহাসে এ আসনে অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এখানে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে অত্যন্ত মজবুত এ আসনটি। যার কারণে এ আসনটিতে দুলুর উপর বার বার আস্তা রেখেছে দলটি।
এবারো ত্রয়োদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দুলুকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রাণালয়ের উপমন্ত্রী এবং এরপর ভৃমি উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রীত্ব থাকাকালীন সময়ে তিনি নাটোরের ব্যাপক উন্নয়ন করেন। প্রতিনিয়তই উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ এবং গণসংযেগি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী। এ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নাটোর জেলা আহ্বায়ক এবং নাটোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল মান্নাফ এনসিপির শাপলা ফুল নিয়ে ভোটে লড়বেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান রয়েছে। অপরদিকে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ইউনুস আলী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, গণসংযোগ করছেন। তবে অন্যান্য বাম দলগুলোর প্রার্থী ঘোষণা করলে নির্বাচনী মাঠে দেখা মেলেনি।
নাটোর-৩ (সিংড়া) এ আসনটিতে বিএনপির বরাবরই জনসর্মথন ব্যাপক। ১৯৯১ সালে জামায়াতের সংসদ সদস্য আবু বক্কর শেরকলীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে এ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ এমপি নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু নাম ঘোষনা করা হয়েছে। এখানে বিএনপির তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা মনোনয়ন পেতে উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আসনটিতে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক দাউদার মাহমুদ, সিংড়া বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার ইউসুফ আলী। অপরদিকে এই আসনটিতে জামায়াতের একক প্রার্থী নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোঃ সাইদুর রহমান, এনসিপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সংগঠনটির জেলা সদস্য সচিব রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম জার্জিস কাদির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ও সংগঠনটির সিংড়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মুফতি রুহুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খলিলুর রহমান রয়েছেন। বিএনপির, জামায়াত ও এনসিপির প্রাথীদের সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ করে চলেছেন।
নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনটি আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামীলীগের সাবেক জেলা সভাপতি প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এ আসনে ছয়বার সংসদ সদস্য র্নিবাচিত হন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজিজ।
অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ও সংগঠনটির জেলার সহ-সভাপতি জামিল আহমেদ।
আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #















