সান্তাহার (বগুড়া) প্রতিনিধি: ১৮৭৮ সালে ইষ্টার্ন ষ্টেট কোম্পানি নির্মিত ঐতিহ্যবাহী, প্রাচীন, সান্তাহার জংসন স্টেশন স্থাপনের সময় স্টেশনে উত্তরপ্রান্ত্রে একটি পথচারী ও যনবাহন পারাপারের জন্য নির্মিত হয় রেলগেট। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত বৃহত্তর সান্তাহারবাসীর যানজটের অন্যতম কারণ এই রেলগেট।
যানযট নিরসনে সান্তাহার নাগরিক কমিটিসহ নানা সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে পথচারী পারাপারের জন্য একটি ওভারব্রিজের। কিন্তু গত ১৪৭ বছর ধরে সেই দাবী উপেক্ষিত হয়ে আছে। আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষের কষ্ট আরো বেড়েছে,কারন যানবাহন বেড়েছে আগের চেয়ে।
শহরের জিরো পয়েন্ট নামে খ্যাত এই স্থানের রেলগেটির দু প্রান্ত্রে দুটি প্রতিবন্ধক আছে। একটি পূর্ব প্রন্ত্রে অপরটি পশ্চিম প্রান্ত্রে । এই স্থান দিয়ে প্রতিদিন মোট ১১টি আন্তঃনগরসহ ২২টি ট্রেন ৪৪টি বার আসা-যাওয়া করে। ফলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ১০ ঘন্টা বন্ধ থাকে এই রেলগেট। নির্ধারিত সময়ের পর খোলার কথা থাকলেও তা খোলে বিলম্বে। রেল লাইনের দুদিক ততক্ষণে পড়ে যায় বিভিন্ন যানবাহনের লম্বা লাইন। রেলগেটের এই ব্যবহারে নাজেহাল সান্তাহার পৌর শহরের বাসিন্দারা। সান্তাহার-বগুড়া মহাসড়ক এই ব্রিজে সংযুক্ত হয়েছে।
সান্তাহার ষ্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বৃটিশ আমলে নির্মিত সান্তাহার ব্যস্ততম স্থানে অবস্থিত এই রেলগেট। এই রেলগেট দিয়ে প্রতিদিন যে সকল ট্রেন যাতায়াত করে তার মধ্যে আছে- রাজশাহী-চিলাহাটি রুটের আন্তঃনগর তিতুমির এ´প্রেস, ঢাকা-চিলাহাটি রুটের চিলাহাটি এ´প্রেস, ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর আন্তনগরএ´প্রেস, খুলনা-চিলাহাটি রুটের রুপসা এ´প্রেস, ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর আন্তনগর এ´প্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে আন্তনগর বাংলাবান্ধা এ´প্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের একতা আন্তনগর এ´প্রেস, ঢাকা-বুড়িমারী রুটে বুড়িমারি আন্তনগরএপ্রেস, রাজশাহী-পঞ্চগড় রুটে বাংলাবান্ধা এ´প্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে আন্তনগর দ্রুতযান এ´প্রেস, ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম আন্তনগর এ´প্রেস, খুলনা-চিলাহাটি রুটের সীমান্ত এ´প্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের লালমনি আন্তনগর এ´প্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের আন্তনগর পঞ্চগড় এ´প্রেস, সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটের দোলন চাঁপা এ´প্রেস, সান্তাহার – বুড়িমারী রুটে করতোয়া এ´প্রেস, সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে বগুড়া মেইল ও পদ্মরাগ এ´প্রেস, সান্তাহার বোনারপাড়া রুটের মেইল ট্রেন, রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটের উত্তরা মেইল,খুলনা-চিলাহাটি রুটের রকেট মেইল, ঢাকা-নিউজলপাইগুড়ি রুটের আন্তনগর মিতালী এ´প্রেস এবং রাজশাহী-চিলাহাটি রুটের বরেন্দ্র এ´প্রেস।
এরমধ্যে ৪৪টি আন্তনগর ও বাকীগুলি মেইল ট্রেন এই রেলগেট দিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়া কিছু মালেেট্রন এই রেলগেট দিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়া আছে ট্রেনের সান্টিং সার্ভিস।
প্রতিদিন এই রেলগেট দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এর মধ্যে আছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।এই রেলগেট দিয়েই পারাপার করতে হয় অ্যাম্বুলেন্স,ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ি গুলোর।
প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনসহ ২০ টি আসা-যাওয়া করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী একটি ট্রেন ষ্টেশনের পাশ^বর্তি ষ্টপেজে আসা মাত্রই রেলগেট বন্ধ হয়ে যাবে।
তারপর ট্রেনটি রেলগেট অতিক্রম করে কাছের ষ্টেশনে পৌছালে রেলগেট খুলে যাবে। কিন্তু এই বন্ধ সময়ে রেলেেটর উভয় পাশে^ শত শত যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যায়। এই সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রেলগেটের নীচ দিয়ে লাইন পার হয় অনেকে। অনেক সময় রেলগেটে আটকা পড়ে অ্যম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি।
সরকারি অফিসে যেতে বা স্কুল-কলেজগামী অনেক শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় দুর্ভোগে। সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানযটের। ফলে সীমহিন কষ্টের মধ্যে বসবাস করছে সান্তাহারবাসী এই রেলগেটের কারণে।
এই রেলগেটের উভয় পাশে আছে ৬ জন গেইটম্যান। তাঁরা ট্রেন আসলে বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে সর্তক করেন। আর রেলগেটের পাশেই রয়েছে সুইচ কেবিন। এই অফিস থেকেই রেলগেটকে নিয়ন্ত্রন করা হয়।
আজ শনিবার সরজমিনে ঐ স্থানে গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ৪টায় সান্তাহার রেলগেট বন্ধ। রেলগেটের উভয় পাশে প্রায় শতাধিক যানবাহনের সারি। স্কুলছুটি শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে ঐ রেলগেট অতিক্রম করছে। রাসেল আহম্মেদ নামে একজন ব্যবসায়ী অনেকটা বিরক্ত ও ক্ষোভের কণ্ঠে বললেন, ’প্রায় ২৫ মিনিট এখানে অপেক্ষা করছি। রেলগেট খোলার নাম নেই। কোন শৃঙ্খলাও নেই এখানে। যে যার মত করে যানবাহনে উঠানামা করছে রেলগেটের কাছেই। একটি ফুট ওভারব্রিজ কেন এখানে হয় না? অনামিকা সাহা নামে একজন সরকারি চাকুরিজীবী রিস্কায় বসে বললেন, প্রায় সময় এই রেলগেট বন্ধ থাকে। এই রেলগেটের কারণে ঠিকমত অফিসে ঠিক সময় পৌছতে পারি না।
সান্তাহার জংসন ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার খাদিজা খাতুন বিটিসি নিউজকে বলেন, সবার সাথে আমিও একমত এখানে একটি ফুট ওভারব্রিজ হোক। তার জন্য সাবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ রেলেওয়ে (পশ্চিম) (পাকশি) সিনিয়র প্রকৌশলী হাাসান আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, সান্তাহার রেলগেটে একটি ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন করতে চাইলে রেলওয়ের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) সেতু প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিটিসি নিউজকে বলেন, দাবিটি যৌক্তিক। কিন্তু যেহেতু এটি বড় প্রকল্প, সে হেতু এলাকার পৌর কর্তৃপক্ষের সুপারিশ সহ আবেদন করতে হবে প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) বরাবর। আর সান্তাহার পৌর কর্র্তৃপক্ষ এই ওভারব্রিজে তৈরিতে যদি অর্থায়ন করেন, সেই ক্ষেত্রে আমরা ফুট ওভার ব্রিজটি কারিগরী সহায়তা দিয়ে নির্মাণ করে দেব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সান্তাহার (বগুড়া) প্রতিনিধি মো. রবিউল ইসলাম (রবীন)। #















