বিটিসি বিনোদন ডেস্ক: রেনেট রেইনসভে হলেন একজন নরওয়েজিয়ান অভিনেত্রী, যিনি মূলত পরিচালক জোয়াকিম ট্রিয়ারের ‘দ্য ওয়ার্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেন। তার অনবদ্য অভিনয়ের জন্য কান উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান এবং বাফটাতেও মনোনীত হয়েছিলেন।
তিনি থিয়েটারেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এবং সম্প্রতি ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’ সিনেমায় অভিনয় করে পুনরায় আন্তর্জাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন, যা তাকে অস্কারের আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
এর আগে ২০২১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করা রেনেট রেইনসভ লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্সে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘দ্য ওয়ার্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ সিনেমায় জুলির ভূমিকায় অভিনয় করার প্রস্তাব পাওয়ার আগের দিন তিনি অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন এবং অভিনয়ের বিকল্প হিসেবে কাঠমিস্ত্রির কাজ করার কথা ভেবেছিলেন।
রেনেট রেইনসভ অভিনয়ের জন্য অসংখ্য প্রশংসা পেয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ানের পিটার ব্র্যাডশ এ সিনেমাটির প্রশংসা করে বলেছিলেন—রেনেট রেইনসভ হলেন সেই অভিনেত্রী, যিনি এ ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং তিনি রকেটের মতো অভিনয় করেন, লিলি জেমস বা অ্যালিসিয়া ভিকান্ডারের প্রতিদ্বন্দ্বী তার অসাধারণ পরিণত, সংবেদনশীল এবং সহানুভূতিশীল অভিনয়ের জন্য তারকা মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য।
রেনেট রেইনসভ সেরা অভিনেত্রীর জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার এবং সেরা প্রধান অভিনেত্রীর জন্য বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন পান। বর্তমানে ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন নরওয়ের এ অভিনেত্রী।
নরওয়ের এক প্রত্যন্ত এলাকায় রেনেট রেইনসভের বেড়ে ওঠা। বনের মধ্যে কিছু বাড়ি আর একটি রাস্তা। নিজেকে সবসময় বেমানান মনে হতো। তিনি বন্ধুদের ব্যাকস্ট্রিট বয়েজে মগ্ন থাকতেন, আবার গোপনে পিঙ্ক ফ্লয়েডও শুনতেন। বাস্তব জীবনে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এত ভুল করতেন যে স্কাউটস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়; পারিবারিক নির্মাণ ব্যবসা করতে পারেননি। কারণ নিয়ম মানতে পারতেন না। ১৬ বছর বয়সে একাই থাকতেন। ১৪ বছরে কেউ এসে বলেছিল—থিয়েটার স্কুলে আবেদন করতে। পেশা হিসেবে অভিনয়ের ভাবনায়—নিজেকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন।
তারপর রেনেট সবকিছু থেকে পালালেন। ১৭ বছরে এডিনবরায় পৌঁছান। হোস্টেল-রেস্তোরাঁ-বারে ডাবল শিফট কাজ; নানা সংস্কৃতির মানুষের সান্নিধ্য, পার্টি—সবই ভালো লেগেছে। তবে ব্রিটিশ রসিকতা বোঝা কঠিন ছিল।
নরওয়েতে ফিরে নাট্যশিক্ষা নিয়ে এক দশক মঞ্চে কাজ করেন। নরওয়েজিয়ান থিয়েটার উচ্চমানের হলেও তিনি নিজেকে শেষ প্রান্তে মনে করেন। সিনেমার প্রস্তাবও মনমতো আসছিল না। তাই কাঠমিস্ত্রি হওয়ার কথাও ভেবেছিলেন, একটি জরাজীর্ণ বাড়ি সংস্কার করতে ভালো লেগেছিল বলে।
শৈশবের বিচ্ছিন্নতার পর আজ তিনি আলোচনার কেন্দ্রে। এই অনুভূতিটা কী?—এমন প্রশ্নের উত্তরে রেনেট রেইনসভ বলেন, আমি জানি না। অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক-দুদিনের মধ্যেই ত্রিয়ের ফোন করেন জুলি চরিত্রের জন্য। এভাবেই জীবন বদলে যায়।
২০২১ সালের জুলাইয়ের একদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে রেনেট ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পড়লেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই বমি করলেন। নরওয়ের এ অভিনেত্রী তখন কানে ছিলেন; আগের রাতে সেখানে প্রিমিয়ার হয়েছে ‘দ্য ওয়ার্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ সিনেমার।
ইয়েকিম ত্রিয়ার পরিচালিত সিনেমাটিতে জুলির চরিত্রে এক তরুণীর খামখেয়ালি অথচ আপসহীন যাত্রা দেখানো হয়। সেটিই ছিল প্রধান চরিত্রে রেনেটের প্রথম সিনেমা। প্রদর্শনী চলাকালেই তার মনে হয়েছিল—এই সিনেমাটি দারুণ; কিন্তু আমি ভীষণ বাজে। কয়েক ঘণ্টা পরই গার্ডিয়ানে সিনেমার রিভিউয়ে তার সম্পর্কে লেখা হয়—সম্ভবত রেনেটে তার প্রজন্মের সেরা অভিনেত্রীদের একজন।
তিনি বলেন, এতটাই অতিরিক্ত মনে হয়েছিল যে মানতে পারিনি, তাই বমি করতে শুরু করলাম। তবে খুশিও হয়েছিলাম বৈকি। নিজের সম্পর্কে সব ধারণাই মুহূর্তে বদলে গেল। আমি খুব অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম।
রেনেট বলেন, তারপর ভাবলাম, ঠিক আছে, এটা থেকে একটু দূরত্ব রাখতে হবে। সমালোচনাকে যেমন অতিরিক্ত নেওয়া যায় না, ঠিক তেমনই প্রশংসাকেও নয়। এমন স্বীকৃতি নিশ্চয়ই নেশার মতো লাগে? তিনি বলেন, ‘জীবনে সবই ক্ষণস্থায়ী। তাই লক্ষ্য ছিল—সবকিছু একটু সমান রাখব, নিজের যে ছবি নিজের মনে আছে সেটাকে অক্ষুণ্ন রাখব।’
‘দ্য ওয়ার্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর সাফল্যের পর যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্রুতই ডাক পাবেন, সেটি অনুমিতই ছিল। সেটি হয়ও। রেনেট রেইনসভে যতটা সম্ভব তারকাখ্যাতির প্রচলিত রূপ থেকে দূরে থাকেন। অভিনয় করেন সেবাস্তিয়ান স্ট্যানের বিপরীতে ‘আ ডিফারেন্ট ম্যান’-এ।
চলতি বছরের মে মাসে আবার কানে ফেরেন ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’ নিয়ে। পরিবার, শিল্প ও ভালোবাসার টানাপোড়েন নিয়ে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সিনেমা। এখানে তিনি নোরা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এক বিষণ্ন অভিনেত্রী, যার বিচ্ছিন্ন চলচ্চিত্রকার বাবা (স্টেলান স্কারসগার্ড) হঠাৎ জীবনে ফিরে এসে তার জন্য লেখা আধা আত্মজীবনী চিত্রনাট্য সামনে ধরেন। ক্ষুব্ধ নোরা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বাবা সেই চরিত্রে নেন উঠতি আমেরিকান তারকা র্যাচেলকে (এল ফ্যানিং), আর নিজের বিচিত্র উপস্থিতিতে নোরা ও তার বোন আগনেসকে অস্বস্তিতে রাখতেই থাকেন।
এ সিনেমাটির শুটিং চলাকালেই রেনেট রেইনসভ নিজেকে বোঝান—এই সিনেমা কখনোই ‘দ্য ওয়ার্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর সমকক্ষ হবে না। কানে উৎসবে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে—’সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’ ততটা তাৎক্ষণিকভাবে মনকাড়া নয়। তবে এটি সুন্দর, বিধ্বংসী, থিমে সমৃদ্ধ এক প্রজন্মান্তরের শক্তিশালী কাজ।
পরে ছবিটি গ্রাঁ প্রি জেতে, এখন তো সিনেমাটি অস্কার দৌড়ে আছে। পেয়েছে গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়নও। কানে সিনেমাটি পেয়েছে ১৯ মিনিটের স্ট্যান্ডিং ওবেশন—উৎসবে ইতিহাসে তৃতীয় দীর্ঘতম।
‘দ্য ওয়ার্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর জুলি ও ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’র নোরা—দুটি চরিত্রই নির্মাতা ত্রিয়ের রেনেটের কথা ভেবেই লিখেছেন। তাহলে কি চরিত্রগুলো আসলে তারই প্রতিচ্ছবি? জুলির সঙ্গে কিছু মিল ছিল—খুশি খুশি, বিষণ্ন কিন্তু সরল। নোরার ক্ষেত্রে পরিচালক তাকে ‘আরও গভীর আবেগের ভারে ভারি করেছেন। #















