রাজশাহীতে পূর্বের তুলনায় টমেটো চাষ কমে গেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: এমন এক সময় ছিল যখন রাজশাহীতে আমের পর দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান ছিল টমেটোর। ট্রাক ট্রাক টমেটো রাজশাহী থেকে অন্য জেলা গুলোই যেত।এখন আর সেরূপ ভাবে টমেটোর বানিজ্য রাজশাহীতে নেই।
অনেক কৃষক এখন টমেটোর আবাদ করেন না। টমেটোর বাজারে ধস নামানোর জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দায়ী। তারা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কাচা বা অপরিপক্ক টমেটো জমি থেকে তুলে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে রোদে রাখলে লাল টকটকে আকার ধারণ করে।
তখন তা বাজারজাত করে। কিছু দিন পূর্বেই টমেটোর রাজ্য বলে খ্যাত গোদাগাড়ীতে এরূপ ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়াতে আসে। এ জাতীয় কেমিক্যাল মিশ্রিত টমেটো মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মতামত প্রদান করেন।গোদাগাড়ীতে টমেটো উঠতে শুরু করেছে। গোদাগাড়ী ছাড়াও জেলার পবা উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলাতে টমেটো চাষ হচ্ছে। তবে ক্রমেই চাষের পরিধি কমছে। চলতি মৌসুমেও কমেছে টমেটো চাষ।
এ অঞ্চলের কৃষকেরা পর পর কয়েক বছর টমেটো চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে টমেটো চাষ থেকে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিষ প্রয়োগের দোহায় দিয়ে নেতিবাচক জনমত তৈরী ও ভাল বীজ না পাওয়া এবং দাম কমের জন্য লোকসান গুণতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, টমেটো চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০ হেক্টর। গতবার হয়েছিল তিন হাজার ৩৭৯ হেক্টর। এরমধ্যে গোদাগাড়ীতেই টমেটো চাষ হয়েছিল ২ হাজার ৬ শ’ ৫০ হেক্টোর জমিতে। চলতি বছর ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এছাড়াও জেলার পবা উপজেলায় এবার চাষ হয়েছে ৪২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতিবছরই টমেটোর আবাদ কমছে।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ২ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে শীতকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ হয়। ২০১৩ সালে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়।
প্রায় দুই যুগ ধরে গোদাগাড়ীর টমেটো অবদান রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে। প্রতিবছর এখানে টমেটো নিয়ে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চাষিরা হতাশ হচ্ছে। উন্নত বীজ আর ভালো দাম না পেয়ে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে চাষিরা টমেটো চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এ অঞ্চলের টমেটো দেশের চাহিদা মেটার পাশা পাশি অর্থনীতিতেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। টমেটো চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হয়েছিল। বর্তমানে টমেটো চাষ দিন দিন কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে পরেছে বিরুপ প্রভাব।
টমেটো চাষ কমে যাওয়ার কারন হিসাবে টমেটোর নায্য মূল্য না পাওয়াকে বেশী দায়ি করেছে টমেটো চাষীরা। পাশাপাশি তারা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, চাষিরা কীটনাশক প্রয়োগ করলে ফলাও করে ছাপানো হয়। আর লোকসান হলে কেহ ফিরেও তাকায় না। আবার যখন টমেটোর ভরা মৌসুম তখন ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে টমেটো দেশে আসায় কৃষকরা টমেটোর দাম কম পায়। যার ফলে নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় এ অঞ্চলের টমেটো চাষিরা।
এছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানী টমেটোর বীজ নিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারনা করায় কৃষকরা টমেটো চাষে আগ্রহ হারিয়েছে।
এ উপজেলায় সব চাইতে বেশী টমেটো চাষ হয় মাটিকাটা, গোদাগড়ী, গোগ্রাম ও চরআষাঢ়িয়া দহ ইউনিয়নে।
মাটিকাটা ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ কৃষি সহকারী অফিসার আশরাফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, এবার মাটিকাটা ইউনিয়নে টমেটো চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শ’ ৫০ হেক্টোর জমি। গত বছর টমেটো চাষ হয়েছিল ৭ শ’ হেক্টোর জমিতে।
এবার টমেটোর বীজতলা তৈরী হয়েছে ২ শ’ শতক জমিতে। গত বছরের তুলনাই এবার বীজতলা প্রায় ৩ গুন কম হয়েছে। তিনি আরো বলেন, টমেটো চাষিরা টমেটোর নায্য মূল্য না পাওয়ায় টমেটো চাষ থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
পবা উপজেলার বরইকুড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল বিটিসি নিউজকে বলেন, গত বছর ২ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছিলাম। কিন্তু ভাল দাম না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই এবার ১ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। এখন ফুল আসছে। এবারেও লোকসান হলে এই আবাদ না করার কথা জানান তিনি। অনেকে এখনো লাগাচ্ছে।
গোদাগাড়ীর চাষিরা বিটিসি নিউজকে জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আয় হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ভালো লাভের আশায় চাষিরা প্রতিবছরই সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ৬-৭ মাস সময় ব্যস্ত থাকে টমেটো নিয়েই।
টমেটো মৌসুমে প্রতিদিনই এ এলাকা থেকে শত শত ট্রাক টমেটো যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু ২০১০ সালে সিনজেনটা কোম্পানীর হাইব্রিড টমেটো সবল এফ-১ চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক।
এ নিয়ে কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সিনজেনটার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে সিনজেনটা কোম্পানী সবল এফ-১ টমেটোর বীজ বাজারজাত বন্ধ করে দেয়।
সবলের বিকল্প বীজ হিসেবে সিনজেনটা কোম্পানী বিপুল, বিগল, হাইটম নামের টমেটোর বীজ বাজারজাত শুরু করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর মিন্টু সুপার ও এনার্জি, সালামত, ভাগ্য, মিন্টু সুপার, নাসিব, লাভলী, ভিএল-৬৪২ নামে হাইব্রিড জাতের টমেটোর বীজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বীজের স্থায়ী সমাধান হয়নি। আবার সেই সঙ্গে রয়েছে ন্যায্য দাম না পাওয়া।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.