নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দিগন্তজোড়া মাঠজুড়ে এখন শুধু হলুদের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরকারি কৃষি প্রণোদনার ফলে এ অঞ্চলে সরিষা চাষে রীতিমতো হলুদ বিপ্লব ঘটেছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর এই উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রকৃতিতে হলুদের চাদর মাঠে মৌমাছির গুঞ্জন ও শিশিরভেজা সকালে সরিষা ফুলের সুবাসে বদলে গেছে গোদাগাড়ীর ফসলি মাঠের চিত্র।
মাঠজুড়ে হলুদের চাদর ও মৌমাছির গুঞ্জন সরেজমিনে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, শীতের শিশিরভেজা সকালে সরিষা ফুলের সুবাস বাতাসে ভাসছে। গাঢ় হলুদ ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য ভিড় করছে। অনেক কৃষক তাদের সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌ-বক্স বসিয়েছেন। এতে একদিকে যেমন খাঁটি মধু উৎপাদিত হচ্ছে, অন্যদিকে পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, সরিষা ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতিতে কেউ নিজ হাতে হলুদ চাদর বিছিয়ে দিয়েছে।
দ্বিগুণ বেড়েছে চাষের পরিধি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ীতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ২৪০ হেক্টর। ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
তথ্যানুযায়ী, গত বছর এখানে সরিষা চাষ হয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার ৪২০ হেক্টর। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটির উর্বরতা এবং স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় কৃষকরা সরিষা চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকেছেন।
সাশ্রয়ী ও লাভজনক আবাদ স্থানীয় কৃষকরা জানান, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে সরিষার বীজ বপন করা হয়। এতে সেচ ও সারের প্রয়োজন হয় খুবই কম। সরিষা চাষের বহুমুখী সুবিধা সম্পর্কে তারা বলেন, সরিষার পাতা ঝরে মাটিতে মিশে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করে।
তেল আহরণের পর সরিষার খৈল গরুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যাহা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয় ।
সরিষা চাষের পর একই জমিতে বোরো ধান চাষ করলে সারের খরচ অনেক কম লাগে।
কৃষকের মুখে সোনালী হাসি উপজেলার কৃষক মোঃ ফজল ডলারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোজ্যতেলের আকাশচুম্বী দামের কারণে তারা নিজেদের তেলের চাহিদা মেটাতে এবং বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে সরিষা চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগ থেকে সময়মতো সার, বীজ ও পরামর্শ পাওয়ায় তারা এবার বড় ধরণের লাভের আশা করছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোজদার হোসেন। তিনি জানান, সরিষা মূলত একটি সাশ্রয়ী ফসল। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, গোদাগাড়ীর এই চিত্র তারই প্রতিফলন। আশা করা যাচ্ছে, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে চলতি মৌসুমে এ এলাকায় সরিষার রেকর্ড উৎপাদন হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভৃমিকা রাখবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #















