নিজস্ব প্রতিবেদক: নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান (এসওসি)।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী এ সংস্থায় সম্প্রতি প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে তদবির ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে।
গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ নেসকোর পক্ষ থেকে ১২টি ক্যাটাগরিতে মোট ১৪৭ জন জনবল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যাহা আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে আবেদনের শেষ সময় রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই নেসকো বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের কয়েকজন নেতা তাদের ‘কোটা’ দাবি নিয়ে নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন) আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহর কাছে তদবির শুরু করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে তারা নেসকোর প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের দপ্তরে গিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত দাবি উপস্থাপন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নেসকো বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা মো. শরিফুল আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ নেসকো আওয়ামী বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিক নেতাকর্মী। অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই শ্রমিক লীগের সাবেক নেতাদের পুনর্বাসনে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের একটি বিতর্কিত অংশ সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব নেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘বটবৃক্ষের ছায়া’র মতো আগলে রাখা হচ্ছে।
নিয়োগ তদবিরে শ্রমিক লীগের নেতাদের সহযোগী হিসেবে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখি, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ সভাপতি আব্দুল বারেক শেখ, পরিবহন সেক্টেরের আরও কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রোকনউজ্জামান আলম ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসালাম তোতাও নেসকোর প্রশাসন বিভাগে গিয়ে নির্বাহী পরিচালক (অ্যাডমিন)–এর কাছে দাবি জানান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ নিয়ে নেসকো জাতীয়তাবাদী বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহরাব হোসেন লাইজু বলেন, “রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের গুটিকয়েক নেতার কারণে আজ জাতীয় শ্রমিক দল বিতর্কের মুখে পড়েছে। সাবেক শ্রমিক লীগের রেজিং নং বি ২২১৬ পদধারীরা শ্রমিক দলের নাম ব্যবহার করে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, যা আমরা ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “যারা স্বৈরাচারী সরকারের আমলে শ্রমিক লীগের পরিচয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে প্রভাব খাটিয়েছেন, তারা এখন শ্রমিক দলের ব্যানার ব্যবহার করে নেসকোতে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন। রোববার দুপুরে নিয়োগ সংক্রান্ত দাবিতে ইডি (অ্যাডমিন) স্যারের কক্ষ কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
লাইজু বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অথচ যারা সেই সময়ে ক্ষমতার সুবিধাভোগী ছিলেন, তারাই এখন নতুন পরিচয়ে আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। “এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না,” বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন) আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, “তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ নানা বিষয়ে দাবি থাকে। আমার দায়িত্ব হলো এসব দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়োগের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্যও নেই।”
নিয়োগকে কেন্দ্র করে শ্রমিক লীগের সাবেক নেতাদের নতুন পরিচয়ে তৎপরতা এবং তা ঘিরে শ্রমিক সংগঠন গুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নেসকোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #















