সান্তাহার (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভা শহরে শহীদদের স্মরণে নামকরন করা সড়কগুলো ভিন্ন নামে পরিচিতি পাচ্ছে। সড়কে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকান বা রোস্তরার সাইনবোর্ড শহীদদের নামে ব্যবহার না হয়ে ভিন্ন নামে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আবার স্থানীয় লোকজন বা গাড়ির চালকেরাও সড়কগুলোকে অন্য নামে ডাকছে। চিঠিপত্র বা পার্শেল ডকুমেন্টেও শহীদদের নামের পরিবর্তে অন্য নাম ব্যবহার হচ্ছে।
সরজমিনে জানা যায়, গত ১০-২-০৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা এল,কে আবুলের নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ঠ একটি প্রকল্প কমিটির তত্বাবধানে সান্তাহার রেলগেট চত্বরে ট্রাফিক আইল্যান্ডে ’মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্থম্ভ’ তিনজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে তিনটি রাস্তার নামকরন করা হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমানের নামে রেলগেট থেকে দক্ষিণ দিকের সড়ক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আসাফুদ্দৌলা দেলালের নামে রেলগেট থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তার ,এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আশরাফের নামে রেলগেট থেকে উত্তর দিকের সড়কের নামকরন করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ট্রাকের ধাক্কায় নামকরনের ফলকটি বেশির ভাগ অংশ ভেঙে যায়। স্থম্ভটি এক সময় অযন্তে আর অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যায় প্রায়।
পরে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদেও একান্ত চেষ্টায় এটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ফলে স্থানীয় লোকজন এবং ব্যবসা প্রতিষ্টানের মালিকদের কাছে নামকরনগুলো পরিচিতি পায়নি।
বর্তমানে শহীদ আজিজার সড়কটি পরিচিতি পাচ্ছে ’স্টেশন রোড’ নামে এবং সব ব্যবসা প্রতিষ্টানের সাইনবোর্ডে স্টেশন রোড হিসাবে ব্যবহত হচ্ছে। আবার ’শহীদ আসাফুদ্দৌলা দেলালের’ নামে নামকরন সড়কটি নামে সড়কটি পারিচিতি পাচ্ছে ’নওগাঁ রোড’ বা ’পৌরসভা সড়ক’ হিসাবে।
শহীদ আসাফুদ্দৌলার ছোট ভাই সান্তাহার ইউপির ঢেকড়া গ্রামের বাসিন্দা জালাল আহম্দে বলেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাামে সড়কের নামকরণ করলেই হবে না, এটি প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করতে হবে। প্রতিটি দোকানের পুরোনা নাম মুছে, নতুন নাম স্থাপন করতে হবে।
সান্তাহার পৌরসভার উদ্যোগে ১৬-১২-২৩ তারিখে এই স্থম্ভটি পুনঃসংস্কার করা হয়। এবার মহান আল্লাহর ৯৯ নাম সম্বলিত একটি সৃউচ্চ স্থম্ভ স্থাপন করা হয়। অত্যন্ত সুন্দর,মনোমুগ্ধকর স্থম্ভটিতে এবার ৪ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ৪ টি সড়কের নামকরণ করা হয়।
দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা উদ্ধোধন করেন সাবেক আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার। রাতের বেলা স্থম্ভটি আকর্ষনীয় করে তুলতে নানা রঙের লাইটিংর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এই স্থম্ভটির সৌন্দর্য নষ্ট করছে স্থম্ভ ঘেষে বেশ কিছু ইন্টারনেট ও ডিসের ক্যাবলের তার।
এইসব স্থানের বেশকিছু ব্যবসাপ্রতিষ্টানের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই বিষয়ে কারো নির্দেশ পায়নি আবার অনেকে বিষয়গুলো জানেনই না। সান্তাহার শহীদ আজিজার সড়কে অবস্থিত মা-বাবা ষ্টোরের মালিক মোঃ নয়ন বলেন , বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। শহীদদের নামকরন বিষয়টি তেমন প্রচার বা প্রতিষ্ঠিত না পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হয়েছে।
সান্তাহার বিপি স্কুলের মোড়ে ’নাসির উদ্দীন টুকুর’ নামে হাসপাতাল রোডের নামকরন করা হয় বেশ কিছুদিন আগে । কিন্তু এই নামে এই সড়ক সম্বন্ধে তেমন কেউই জানে না। এই রাস্তায়ও এই শহীদের নামে কোন ব্যবসা প্রতিষ্টানের সাইনবোর্ডে উক্ত শহীদের নাম ব্যবহার হচ্ছে না। আবার রথবাড়িতে ১৯৭১ সালে এই এলাকার স্বনামধন্য জমিদার ’শহীদ সুরেন্দ্রনাথের’ নামে একটি নামফলক করা হলেও পরিচিতি পায়নি শহীদের সড়ক নামে।
সান্তাহার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোরশেদ এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রতিটি রাস্তা নামকরনে প্রশাসনিক পদক্ষেপ চাই।
আদমদীঘি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা এ পযর্ন্ত ১১ টি শহীদ মুত্তিযোদ্ধার নামের স্মৃতিফলক সংস্কার করেছি এবং সান্তাহরের ফলকগুলো অচিরেই পুনরাই তৈরী করতে পারবো আশা করি।
সান্তাহার পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শহীদের নামে রাস্তা অন্য নামে ব্যবহার হওয়াটা দুঃখজনক।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমা বেগম বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কগুলো অন্য নামে ব্যবহার হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি কিছুদিন আগে এই উপজেলায় যোগদান করেছি। কেউ যদি বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে আমার কাছে আবেদন করে,তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আর সরকারি আর্থিক সহায়তা পেলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সান্তাহার (বগুড়া) প্রতিনিধি মো. রবিউল ইসলাম (রবীন)। #















