গণধর্ষণের শিকার হওয়া গৃহবধূর সঙ্গে ধর্ষকের ‘জোর করে’ বিয়ে দিলেন ওসি!

পাবনা প্রতিনিধি: গণধর্ষণের শিকার হওয়া গৃহবধূ মামলা করতে গিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ ধর্ষণের মামলা নেয়নি। বরং উল্টে গণধর্ষণে অংশ নেয়া ৫ জনের মধ্যে থেকে একজনের সঙ্গে জোর করেই থানাতেই বিয়ে দেন। ওই গৃহবধূর স্বামী রয়েছে। স্বামীর অনুমতিও নেয়া হয়নি। কোনো কথা শোনা হয়নি ধর্ষিত গৃহবধূর। এমন অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ৩ সন্তানের জননী ওই গৃহবধূ ও তার বাবার। 

তবে, পুলিশ এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, তবে থানায় নয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় এই বিয়ে দেয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পাবনা সদর থানায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পাবনায় জনসাধারণ ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গৃহবধূর লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয়রা বিটিসি নিউজকে জানান, সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামে ওই নারী স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিল। গত ২৯ আগষ্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ চার সহযোগীকে নিয়ে ওই নারীকে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

টানা কয়েকদিন ধর্ষণের পর নির্যাতিতা গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা গত ৫ সেপ্টেম্বর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে গৃহবধূর নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ধর্ষক রাসেলকে আটক করে।

তবে বিষয়টি মামলা হিসেবে থানা পুলিশ এজহারভুক্ত না করে স্থানীয় একটি চক্রের মধ্যস্থতায় পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে ধর্ষক রাসেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি নিষ্পত্তির চেষ্টা করে।

গৃহবধূর বাবা বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার মেয়ে অপহৃত হওয়ার কয়েকদিন পর তাকে খুঁজে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানায় অভিযোগ দেই। পুলিশ আমাদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে মেয়েকে থানা হেফাজতে রেখে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি থানায় ধর্ষক রাসেলের সাথে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী সন্তান থাকা অবস্থায় রাসেলের সাথে তাকে কিভাবে বিয়ে দেয়া সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ঘটনায় আমরা সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়েছি। আমরা ধর্ষকদের বিচার চাই।’

দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য দৌলত আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘গণধর্ষণের অভিযোগে সদর থানার উপ-পরিদর্শক একরামুল হক আমার উপস্থিতিতে রাসেলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে শুনি থানায় তাদের বিয়ে হয়েছে। এই বিয়ে কোনোভাবেই শরিয়ত সম্মত নয়।

একাধিক এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘স্বামী ও তিন সন্তান থাকা অবস্থায় থানা পুলিশ কি করে একই সময়ে তালাক ও বিয়ে দিল। ৫ জন ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও একজনের সাথে কিভাবে বিয়ে দিল পুলিশ প্রশ্ন গ্রামবাসীর। তারা ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন।’

নির্যাতিত গৃহবধূ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রাসেলকে আটক করে আনার পর ওসি স্যার নিজেই থানায় কাজী ডেকে এনে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত রাসেল আহমেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি ধর্ষণের সাথে জড়িত নই, আমাকে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে মামলা ও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। থানায় আমাদের বিয়ের সময় এসআই একরাম আমাদের ছবিও তোলেন।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকারকর্মী এড. কামরুন্নাহার জলি বিটিসি নিউজকে বলেন, ধর্ষণের বিচার না করে, ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেওয়া সামাজিক মিমাংসার নামে প্রহসন। থানায় ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি উভয়ের সম্মতিতেও এই বিয়ে হয়, তবুও তা ধর্ষকদের উৎসাহিত করার সামিল। যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে এর সাথে জড়িত সবারই দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বিষয়টি অস্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। ওই দিন রাতে তাদের বিয়ের কথা শুনেছি, তবে তা থানায় কোনো বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের এর সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি যেহেতু জানতে পেরেছি, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম নীতিতে এই ধরনের বিবাহের বৈধতা আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর পাবনা প্রতিনিধি মো: ময়নুল ইসলাম লাহিড়ী মিন্টু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.