নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও আমণের বাম্পার ফলন । অতিবৃষ্টিতে আমন ধানের চারা পচে যাওয়ার পরও হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। কৃষকের সোনালী পাকা ধান দোল খাচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে। রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়াতে খুশি কৃষকরা। ধান পাকতে শুরু করায় কাঁটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।
চলতি মৌসুমে রোপা আমন চাষে আশানুরূপ ফলন দেখে উচ্ছ্বসিত কৃষকরা।
সময়মতো বৃষ্টি, অনুকূল আবহাওয়া, কম খরচে বেশি ফলনের সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে এবারের মৌসুম নিয়ে আশাবাদী তারা। কৃষি কর্মকর্তারাও বলছেন, সময়মতো সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় ‘উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর তানোর, মোহনপুর, পবা, গোদাগাড়ী,বাগমারা, দুর্গাপুর ও চারঘাট উপজেলার মাঠজুড়ে এখন সোনালী ধানের হাওয়ায় মুখর গ্রামাঞ্চল। মাঠে চলছে ধান কাটার উৎসব।
কৃষকরা বলছেন, এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূলে, সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় সেচ খরচ কম পড়েছে। ফলে আগের বছরের তুলনায় উৎপাদনও ভালো। তবে শেষ সময়ের বৃষ্টিতে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। যা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় প্রায় ৮৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে চাষ হয়েছিল ৮৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন।
এদিকে হেমন্তের শুরুতে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ধানক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষক ও কর্মকর্তাদের মতে, সময়মতো আবহাওয়ার অনুকূলতা বজায় থাকলে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে রোপা আমনে বাম্পার ফলন হবে, যা জেলার খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) গাল্লা গ্রামের কৃষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি ১৩ বিঘা জমিতে বিআর-৫১ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৫ বিঘার ধান কাটা হয়েছে, আশা করছি ২০ থেকে ২২ মণ করে ধানের ফলন হবে।
তিনি বলেন, গেলবার সেচে অনেক খরচ পড়েছিল, এবার প্রকৃতির আশীর্বাদে তেমন খরচ হয়নি। ফলনও ভালো হবে, বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তবুও আশা আছে ধানের দাম পেলে লাভ পাবো কিছুটা।
দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান চলতি মৌসুমে প্রায় ২ বিঘা জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু করেছেন এবং আশা করছেন বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ ধান পাবেন। ধানের দাম আশানুরূপ থাকলে । তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, এবারে জমিতে পানি দেওয়া লাগেনি বললেই চলে। এতে খরচও অনেক বেচে গেছে। ধানের দাম পেলে লাভবেশি হবে।
গোদাগাড়ী উপজেলার ঘিয়াপুকুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, এ বছর পানি নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ঠিক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময়ের বৃষ্টি চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। এতে ধান ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আশা করি কিছুটা লাভ করতে পারবো। সময়টা আমাদের জন্য উৎসবের। আমরা একে বলি আমন উৎসব।
চারঘাট উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রহিমন রহিম বিটিসি নিউজকে জানান, গেল কয়েক বছর বিভিন্ন কারণে আমন চাষের ফলন কম ছিল। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকূল ছিল এবং কীট-পতঙ্গ তেমন ছিল না, এ কারণে ফলন ভালো হয়েছে।
পবা উপজেলার বাগধানী গ্রামের কৃষক মাসুদ বিটিসি নিউজকে বলেন, শেষ মুহুর্তের অতিবৃষ্টিতে যেসব জমির ধানগাছ নুয়ে পড়েছে সেগুলোর ফলন একটু কম হবে। এছাড়া মোটামুটি ধান ভালোই আছে,ফলন ভালো হবে, বাজারে ভাল দাম থাকলে তারা লাভবান হবেন।
এবিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, বৃষ্টিতে কিছু জায়গায় ক্ষতি হলেও সামগ্রিকভাবে আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তেমন প্রভাব ফেলবে না। বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটাও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

















