কক্সবাজার প্রতিনিধি: শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন বিজয়া দশমীতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মহাযজ্ঞে মুখরিত হয়ে উঠেছে। অসংখ্য মানুষের পদচারণায় সৈকত এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর ২টায় লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে বিজয়া সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হয় দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন।
প্রতিমা বিসর্জনের বিশাল আয়োজন
কক্সবাজার জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা ট্রাকে করে সৈকতে আনা হয়েছে।
এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকেও প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে। তবে চকরিয়া ও পেকুয়ার মণ্ডপগুলোর প্রতিমা মাতামুহুরী নদীতে বিসর্জন করা হচ্ছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু জানান, বিকাল ৫টায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সাগরে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এই বৃহৎ আয়োজন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই বিশেষ দিনে কক্সবাজারে সমবেত হয়েছেন।’
তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা
আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল থেকে সৈকত এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি টহল লক্ষ করা গেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের সমন্বিত কন্ট্রোলরুম কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সফল করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আগত পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতেও আমরা তৎপর।’
পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
চার দিনের টানা ছুটি ও বিজয়া দশমীকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে আগামী কয়েকদিনে ৫ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হোটেল মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শতভাগ রুমের অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। আগামী কয়েকদিন হোটেলগুলোতে প্রচুর চাপ থাকবে। পর্যটকদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত রুম ভাড়া না নেওয়ার জন্য হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শহরে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রতিমা বিসর্জন সফল করতে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা শুরু থেকেই বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
বৈরী আবহাওয়ায় সতর্কতা
বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করেছে।
সি সেইফ লাইফগার্ডের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় সৈকতে গোসল ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যটকদের গুপ্তখালের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। লাইফগার্ড সদস্যরা নিরলসভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন, তবে পর্যটকদেরও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।’
কক্সবাজারের এই প্রাণবন্ত আয়োজন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি পর্যটনশিল্পের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং স্থানীয়দের আন্তরিকতায় এই উৎসব পর্যটকদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.