শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে রাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনায় এক শিক্ষককে ‘লাঞ্ছনার’ অভিযোগ তুলে জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বর্জন করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে একটি বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ছাত্রনামক কতিপয় সন্ত্রাসী শিক্ষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে।
এই ঘটনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কখনও হয়নি। তারা এই ন্যাক্কারজনক হামলায় জড়িত ছাত্র নামক সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। এ সময় তারা বলেন, যতদিন শাস্তি দৃশ্যমান না হবে, আন্দোলন চলবে।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মূল দাবিগুলো হলো: 
শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার।
যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, তাদের সনদ বাতিল।
রাকসু নির্বাচনে জড়িতদের প্রার্থীতা বাতিল।
ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সালাহউদ্দিন আম্মার (পোষ্যকোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতা) এবং তার সহযোগীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই আম্মার এমন এক বেয়াদব এবং সন্ত্রাসী, যে হাতে পিস্তল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার এই সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের যেভাবে লাঞ্ছিত করেছে, আমরা যদি এর সুষ্ঠু বিচার না করতে পারি; তাহলে ভবিষ্যতে আমাদেরও পূর্ণরায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ছাত্রনামক কতিপয় সন্ত্রাসী শিক্ষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে। গত ৯ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রহসনের অনেক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার একটিও আলোর মুখ দেখেনি। তাই আমরা আর ঐ সিদ্ধান্তে ক্ষান্ত হচ্ছি না। শিক্ষকদের ওপর হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূ‚লক শাস্তি দেখেই আমরা ক্ষান্ত হবো।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক দিল-আরা হোসেন এই ঘটনাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন আখ্যায়িত করে বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছনার এই ঘটনা ছাত্র নামে কিছু অছাত্র কিভাবে করতে পারে তা আমাদের মাথায় ঢোকে না। আমার সহকর্মী অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন একজন সহনশীল লোক, তার ওপর হামলাটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কায়দা করে তার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমি তার বিভাগের সভাপতি হিসেবে এইসব ছাত্র নামক সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্যাম্পাস ফাঁকা, শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এর আগে, গত রবিবার পোষ্য কোটা নিয়ে উদ্ভত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং শেষে প্রশাসন পোষ্য কোটা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সাথে, গত শনিবারের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.