রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:কাপ্তাই হ্রদ, সুউচ্চ পাহাড় ও সবুজ অরণ্য ঘেরা বৈচিত্র্যময় পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ষড়ঋতুর ছয় রঙে সেজে থাকে। এ জেলার পরতে পরতে মেলে চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া।
শ্রাবণের ধারায় নবরূপে সেজেছে জেলার বরকল উপজেলার শিলার ডাক নামক স্থানে অবস্থিত সুবলং ঝরনাটি—যা হাতছানি দিচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের।
প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন সুবলং ঝরনার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
কয়েক দশক ধরে এই পাহাড়ি ঝরনাটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
ঝরনার নির্মল জলধারা যেন পর্যটকদের হৃদয়ে ভিন্ন এক অনুভূতির সৃষ্টি করে।
ভরা বর্ষায় মূল ঝরনার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নিচে আছড়ে পড়ে, যা এক অপূর্ব সুরের মূর্ছনায় পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে।
পর্যটকদের সুবিধার্থে বরকল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে।
রাঙামাটি সদর থেকে সুবলং ঝরনার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। কাপ্তাই হ্রদ অতিক্রম করে বোটে করে যাওয়া যায় সেখানে। যাত্রাপথেই পর্যটকরা হ্রদের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
সুবলং ঝরনায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত বোটে করে পর্যটকরা আসছেন। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন। কারও হাতে সেলফি স্টিক, কেউ ড্রোন উড়াচ্ছেন, আবার কেউ পাহাড়ি খাবার খাচ্ছেন ঝরনার পাশে বসে।
পর্যটকদের অনেকেই জানিয়েছেন, এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, গাছপালা নষ্ট না করা এবং ঝরনায় অনিরাপদভাবে নামা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক মিলি জাহান বিটিসি নিউজকে বলেন, “সুবলং ঝরনায় এবারই প্রথম এলাম। টিভি ও ফেসবুকে দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলাম, বাস্তবে এসে মনে হলো—এ যেন কয়েক গুণ বেশি সুন্দর! একেবারে মন ছুঁয়ে যায়।”
রাঙামাটি শহর থেকে পরিবার নিয়ে আসা মৌসুমী বণিক বিটিসি নিউজকে বলেন, “অনেক ভালো লাগছে। ঝরনার অঝর ধারায় মনটা জুড়িয়ে গেছে। এতদিন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কেন দেখিনি, সেটাই ভাবছি।”
আরেক পর্যটক আব্দুল সায়েম বিটিসি নিউজকে বলেন, “এই ঝরনার পরিবেশ একেবারে মনোরম। মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। বন্ধুদের বলবো—জীবনে একবার হলেও এখানে ঘুরে আসা উচিত। প্রকৃতির সঙ্গে এক ধরনের আত্মিক সংযোগ তৈরি হয়ে যায়।”
ঝরনা দেখে ফেরার পথে পর্যটকরা হ্রদের পাড়ে গড়ে ওঠা পাহাড়ি রেস্তোরাঁগুলোতে সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।
ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে যে কেউ অবলীলায় ছুটে আসতে পারেন সুবলং ঝরনার কোলে। শুধু সুবলং নয়, বরকল উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে আরও আটটি ঝরনা রয়েছে, যেগুলো একইভাবে মন ভরাবে, ক্লান্তি দূর করবে।
সুবলং ঝরনা দেখতে চাইলে রাঙামাটির পর্যটন, রিজার্ভ বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কিংবা ফিসারিঘাট এলাকা থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে যাওয়া যায়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.