চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের কালীরচরে ২৮৪টি মহিষ নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপ এলাকায় ‘হঠাৎ আর্বিভূত’ হওয়া এসব মহিষের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এরপর স্থানীয় এক বিএনপি নেতার পরিবার মহিষগুলো নিজেদের মালিকানা দাবি করলেও সেগুলো পলাতক কোনো আওয়ামী লীগ নেতার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে মহিষের মালিকানা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে গত ৪ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের কালীরচরে মহিষগুলো আলোচনায় আসে। ওই দিন বেলা গড়াতেই মহিষের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মহিষগুলো রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহিষগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের পর সন্দ্বীপে মহিষ আনার খবর শুনে নোয়াখালী, হাতিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা ও সন্দ্বীপের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন আসতে থাকেন। তাদের অনেকেরই মহিষ হারিয়েছে অথবা চুরি হয়েছে। এ নিয়েই মূলত বিপত্তি তৈরি হয়। তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি করেন, এসব মহিষ পলাতক কোনো আওয়ামী লীগ নেতার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব মহিষ এসেছে সন্দ্বীপের দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর থেকে। মহিষগুলোর মালিকানা দাবি করেছেন উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি আবদুর রহিম ও তার বোনের পরিবার। তবে তাদের এই দাবির পরেও বিতর্ক থামেনি। মহিষগুলো বর্তমানে রাখা হয়েছে সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তাছলিমা বেগমের জিম্মায়।
মহিষের মালিকানা দাবি করা আবদুর রহিম চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেনের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। মহিষগুলো সন্দ্বীপে আনার কাজে সহায়তা করেন আজিজ নামের এক যুবদল নেতা। তিনিও বেলায়েত হোসেনের অনুসারী বলে এলাকায় পরিচিত। এ অবস্থায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকেই একটি পক্ষ মহিষের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুরো বিষয়টিকে জটিল করেছে বলে দাবি আবদুর রহিমের ছেলে মো. আজিমের।
মো. আজিম বিটিসি নিউজকে বলেন, ২৮৪টি মহিষের টিকা দেওয়ার কার্ড তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে দিয়েছেন। এরপরও বিষয়টি অহেতুক জটিল করা হচ্ছে। দলীয় কোন্দলের কারণে আমাদের হেনস্তা ও বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। তবে সেই পক্ষটি কারা, তা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি।
বিএনপির সন্দ্বীপ উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব আলমগীর হোসাইন ঠাকুর বিটিসি নিউজকে বলেন, উড়িরচরে চারণভূমির সংকটের কারণেই আবদুর রহিম মহিষগুলো সন্দ্বীপে এনেছেন। তবে দলের ভেতরে কোন্দল থাকায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু তাহের বিটিসি নিউজকে বলেন, দলীয় পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রশাসন যেন যথাযথভাবে মালিকানা যাচাই করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে—আমরা সেটাই চাই।
এদিকে মহিষের মালিক কে, এটি নির্ধারণ করতে চলতি মাসের ৯ জুলাই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে। তবে একাধিক পক্ষ মহিষের মালিকানা দাবি করছে বলে জানিয়েছেন এ কমিটির সদস্যরা। এই দাবির প্রেক্ষিতে সব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা বিটিসি নিউজকে বলেন, মহিষের মালিকানা নির্ধারণে তদন্ত চলছে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান স. ম. জিয়াউর রহমান। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.