সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীর উপর নির্মিত এল্লারচর সেতুটির একাংশ ধ্বসে পড়েছে। ফলে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা এবং আশাশুনি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ১৫দিন আগে গত ১৮ মে রাতে সেতুটির একাংশ হঠাৎ ধ্বসে পড়ে। এরপর থেকে নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের বালিথা, এল্লারচর, শিমুলবাড়িয়া, ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের দহাকুলা, মেল্লেকপাড়া, বড়খামার, উমরাপাড়া, পৌরসভার কুখরালি, চালতেতলা, গড়েরকন্দা, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের বিলশিমুলবাড়িয়া, চরবালিথা, শ্যামনগর, ঢালিরঘের, আন্দোলপোতা, শশাডাঙ্গা, গবরাখালি, টিকেট, পুঁটিমারি, রঘুনাথপুর এবং আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের সরাফপুর, হাজিপুর, বাউচাষ, শালখালি, বদরতলাসহ অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, এল্লারচর সেতু দিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মেডিকেল হসপিটালে শত শত রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে, তাছাড়া ব্যাবসায়ী সরকারী-বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। সেতুটি ধ্বসে পড়ার পর তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আশেপাশে বিকল্প কোন মাধ্যম না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষ পারাপার হচ্ছেন। ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সেতুর ওপারে দেবহাটার অংশে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না। এতে করে বিপাকে পড়েছেন চিংড়ি ও সবজি চাষিরা। যেকোন সময় সেতুটির সম্পূর্ণ অংশ ধ্বসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের মেম্বর ও গণমাধ্যমকর্মী আরশাদ আলী বিটিসি নিউজকে জানান- সেতুটি ধ্বসে পড়ায় তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম জনদুর্ভোগে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ষাটের দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নদীতে বেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। নদী শাসনের ফলে মরিচ্চাপ নদী মরা নদীতে পরিণত হয়।মরা নদীর উপর নির্মাণ করা এল্লারচর সেতু। এরপর দুই-তিন বছর আগে খনন করা হয় মরিচ্চাপ নদী। যদিও নদীটি খননের সময় আদি ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে খনন করা হয়নি। নদী খননের পর জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হয়। এমতাবস্থায় ১৫দিন আগে ১৮ মে রাতে এল্লারচর সেতুটি ধ্বসে পড়ে। এতে করে তিন উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ সোমবার সকালে ধ্বসে পড়া এল্লারচর সেতুটি পরিদর্শন করে বিটিসি নিউজকে জানান, “সেতুটি অনেক পুরাতন। সেতুটির প্রশস্ততা নদীর চেয়ে কম। জোয়ার-ভাটার স্রোতের টানে হয়তো সেতুটি ধ্বসে গিয়েছে। আপাতত সেতুর পাশে ব্লকদ্বারা সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ আপাতত চলাচল করতে পারে। সেতুটি পুনর্নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইনুর ইসলাম শাহিন, স্মার্ট ১৪ নং ফিংড়ী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.