কুমিল্লায় ঘূর্ণিঝড়ে বিকল ৬২ ট্রান্সফার্মার, ভেঙেছে ৮৪ খুঁটি

কুমিল্লা ব্যুরো: কুমিল্লায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাসে ৬২ ট্রান্সফার্মার বিকল ও ৮৪ খুঁটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মহাব্যবস্থাপকরা। এদিকে ৩০ শতাংশ লাইনম্যান আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত সংযোগ মেরামতে হিমশিম খাচ্ছে সমিতিগুলো। এতে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত থেকে জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় আজও শতভাগ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১, ২, ৩ ও ৪ এর সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে ঘুর্ণিঝড়ে ৮৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে ৬২টি এবং প্রায় সাড়ে ৪০০ স্থানে বিদ্যুতের তাঁর ছিঁড়ে গেছে। এছাড়াও দুইশতাধিক স্থানে পোল হেলে যাওয়া, শতাধিক স্থানে ক্রস আর্ম ভেঙ্গে, দেড়শতাধিক স্থানে ইনসুলেটর ও ৩ শতাধিক স্থানে মিটার ভেঙ্গে  বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। এর মধ্যে প্রতিটি সমিতির ৩০ শতাংশ লাইনম্যান আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত সংযোগ মেরামতে হিমশিম খাচ্ছে সমিতিগুলো।।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বিটিসি নিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর শনিবার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি। মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে আগেরদিন। ফ্রিজ থেকে পানি বের হয়ে সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
চান্দিনা উপজেলার সব্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা বিটিসি নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যায় একটু উঁকি দিয়ে ঘণ্টাখানেক ছিল। তারপর সেই বিদ্যুৎ আসে শুক্রবার বিকালে। ততক্ষণে আমার হেচারীর শতশত মুরগীর ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
জানা গেছে কুমিল্লা মহানগরীসহ, ১৭টি উপজেলা এবং পাশের দুটি জেলার আরও দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতের চারটি সমিতি। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন কুমিল্লা মহানগরী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ স্বাভাবিক আছে। ঘূর্ণিঝড়ে এ এলাকায় বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা জানা যায়নি।
কুমিল্লার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আবু রায়হান বিটিসি নিউজকে বলেন, তার অধীনে থাকা চারটি উপজেলায় ২৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১৯টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৫৫ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় চান্দিনা উপজেলায়। ওই উপজেলাতেই আটটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেষ্ঠ্য মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বিটিসি নিউজকে বলেন, তার সমিতির অধীনে থাকা ছয়টি উপজেলায় সাতটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে এবং ১৩টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মহাব্যবস্থাপক মুজিবুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, তার সমিতির অধীনে থাকা ছয় উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে এবং ১৮টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সমিতির অধীনে ১৮০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর মহাব্যবস্থাপক শহীদ উদ্দীন বিটিসি নিউজকে বলেন, তার অধীনে থাকা তিনটি উপজেলায় ৯টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে ১২টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৭৬টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি সমিতিতে ১-২শ লাইনম্যান নিয়োজিত। কিন্তু আন্দোলন করতে তারা ঢাকায় আছে ৩০ শতাংশ। তাই এই বিপর্যয়ের সময় লাইনম্যানের সংকটে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ লাইন সংস্কারে বহিরাগত লোকজন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক মো. আবু রায়হান বিটিসি নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বৈদ্যুতিক লাইন অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তবে ঝড়ের রাত থেকেই আমাদের লোকজন কাজ করছে। বর্তমানে আমাদের সবগুলো লাইনই চালু আছে, তবে বিভিন্ন সেকশন বন্ধ থাকায় কিছু কিছু এলাকায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। দ্রুতই সেসব এলাকায় সমস্যার সমাধান করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান আব্দুল্লাহ আল মানছুর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.