খুলনা ব্যুরো: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। তবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা। প্রতি বছর কোনো না কোনো দুর্যোগে দেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় খুলনা জেলায় নেয়া হয়েছে আগাম প্রস্তুতি।
সাম্প্রতিক নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়জনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে ৯টি উপজেলার জন্য ২৭ লক্ষ টাকা নগদ সহায়তা, বিপুল পরিমাণ শুকনো খাবার, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতকরণ এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে সক্রিয় রাখা হয়েছে।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খুলনা জেলার জন্য প্রাথমিকভাবে ২৭ লক্ষ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খুলনা বিভাগজুড়ে জরুরি সহায়তার অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৮০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ টাকা এবং শিশু খাদ্য।
এছাড়া খুলনা বিভাগের ১০ জেলার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে, প্রায় ২৯ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট। শুধুমাত্র খুলনা জেলার প্রতিটি উপজেলায় ১৬০টি করে শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে রয়েছে চাল, ডাল, লবণ, তেল, চিনি, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া ও ধনে গুঁড়াসহ ৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদান।
খুলনা জেলায় মোট ৬০৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি মাল্টিপারপাস বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্রে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রসূতি নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। মাল্টিপারপাস আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মূলত কয়রার ৫টি, পাইকগাছার ৫টি, দাকোপের ৫টি, বটিয়াঘাটার ৫টি এবং ডুমুরিয়ার ৪টিতে অবস্থিত।
গবাদিপশু রক্ষায় কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় ৩টি মাটির কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা গবাদিপশুর জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। খুলনার কয়রা উপজেলার সদর, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের কামারখোল, দাকোপের সুতারখালীসহ নদীতীরবর্তী ও বাঁধ-সংলগ্ন এলাকাগুলোকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাঁধ রক্ষা ও নজরদারির জন্য ওয়াপদার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলোর ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে।
খুলনা জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ৫,২৮০ জন সিপিপি (Cyclone Preparedness Programme) ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২,৬৪০ জন পুরুষ ও ২,৬৪০ জন নারী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির, সদস্য সচিব ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম জানান, “ঘূর্ণিঝড় শক্তি সঞ্চয় করছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে আমরা পর্যায়ক্রমে সহায়তা ও কার্যক্রম বাড়াব। প্রতিটি উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারের প্যাকেট তৈরি ও বিতরণ কাজ চলমান। আশ্রয়কেন্দ্র, ত্রাণ, টিন এবং ওষুধপত্র সব কিছু প্রস্তুত আছে।”
তিনি আরও বলেন, খুলনার প্রতিটি উপজেলায় ৯০ বান্ডিল করে ঢেউটিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.