বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অনেক দেশের মতো ফিলিস্তিনেও আজ ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন। ঐতিহ্যগতভাবে আনন্দ ও উৎসবে পরিপূর্ণ এই সময়। কিন্তু এই দিনটিতে গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং কামানের গোলার শব্দে আজানের আওয়াজও শোনা যায়নি।
ঈদ উদযাপনের জন্য গাজার খান ইউনিসে ধ্বংসস্তূপে জড়ো হওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচ শিশুসহ ৯ জনকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রের বরাতে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, খান ইউনিস ছাড়াও জাবালিয়া ও গাজা সিটির আরও কয়েকটি স্থানে ৩ জন শিশু ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে উদযাপনের জন্য জড়ো হওয়ার পরিবর্তে মানুষজন তাদের প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করেছে। সেই সঙ্গে গোলাবর্ষণের শব্দের মাঝেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে চলছে ঈদের নামাজ আদায়।
মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আর জাজিরার রিপর্টার বলেছেন, এই দিনে নতুন পোশাক পরা শিশুরা ক্ষুধার্ত এবং মানসিকভাবে আহত। মানুষের নিরাপত্তার কোনো অনুভূতি নেই এবং উৎসবের খাবারও প্রস্তুত করার মতো কিছু নেই। এখানকার মাটিতে যেন দুর্দশার কোনো শেষ নেই।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং গাজার প্রাক্তন বাসিন্দা মনসুর শোমান জানান, সকাল থেকেই যেখানেই সম্ভব ভাই-বোন, মা-বাবা, দাদা-দাদি, বাচ্চারা একে অন্যের বাড়িতে আসছে। তারা নিশ্চিত করছে যে, সামাজিক বন্ধন গাজায় ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী পারিবারিক কাঠামো – এই বিধ্বংসের মাঝেও উন্নত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গাজার বয়স্কদের প্রতি সবার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা এই পারিবারিক ভ্রমণের নেতৃত্ব দেন। বয়স্করাই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা বা ঝগড়া থাকলে, ঈদের সময় তা সমাধান করেন।
শোমান বলেন, এই অঞ্চলে অর্থের সংকট এবং ভয়াবহ পরিস্থিতির ফলে দুর্ভাগ্যবশত, এই প্রজন্মের শিশুরা…তাদের বড় ভাই-বোনদের মতো ঈদের অনন্দ উপভোগ করতে পারে না।
ফিলিস্তিনি তথ্য কেন্দ্রের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নামাজের সময় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এছাড়া জেনিন কবরস্থানে ফিলিস্তিনিদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ঈদুল ফিতরে জেনিন কবরস্থানে প্রিয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলিরা। এর ফলে শ্বাসরোধে আহত হয় অনেকেই।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, এলাকায় কাঁদানে গ্যাসের মেঘ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতা নিরাপত্তার জন্য ছোটাছুটি করছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের গণহত্যার যুদ্ধে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ২৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১৪০৯৫ জন।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণে ২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলের নতুন তাণ্ডবে ৯২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২,০৫৪ জন আহত হয়েছেন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.