BTC News | বিটিসি নিউজ

ঘরে ফিরে গাজাবাসী দেখছেন চারদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ

ঘরে ফিরে গাজাবাসী দেখছেন চারদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টানা প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলি হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ানো লাখো ফিলিস্তিনির জীবনে যুদ্ধবিরতি আপাত স্বস্তি এনেছে। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা তাঁদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন।

যদিও বাড়ি বলতে এখন আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ, তবুও ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়ায় বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও শুক্রবার রাতটি অনেকটা নির্ভয়ে কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেক ফিলিস্তিনি।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল কর্তৃক গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা দখলের পর প্রথম দফায় সেনা সরানোর পর গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শনিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, প্রথম ধাপের সেনা সরানোর কাজটি শেষ করেছে তারা, তবে এ বিষয়ে হামাসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।lamonde

ইসরায়েলের হামলার মুখে গত প্রায় দুই বছরে গাজার বাসিন্দাদের বহুবার বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে। বাড়িঘর হারানো এসব মানুষ সঙ্গে যা আছে, তাই কাঁধে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে নিজেদের বসতভিটায় ফিরছেন। সেখানে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাঁবুতে রাত যাপন করেন অনেক ফিলিস্তিনি।

গাজা নগরীর বাসিন্দা মুহাম্মদ মুর্তজা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা শুধু চাই, এই যুদ্ধটা চিরতরে শেষ হোক। আমাদের যেন আর কোনো দিনও পালিয়ে যেতে না হয়।’

যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে হামাসের কাছে থাকা সব জিম্মিকে ছেড়ে দিতে হবে, এবং এর বিনিময়ে ১ হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনি বন্দী ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। হামাসের কাছে থাকা ৪৮ জিম্মির মধ্যে জীবিত আছেন ২০ জন।

হামাস নেতাদের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, মুক্তি দিতে এই ২০ জিম্মিকে এক জায়গায় করেছে হামাস। অন্যদিকে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ শবিবার সন্ধ্যায় জানায়, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।

এ পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে ইসরায়েলে পৌঁছাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে গাজা চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোমবারই তিনি দেশটিতে যাবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোসহ ইতালি ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রীও এতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় টানা নৃশংসতা চালায় ইসরায়েল, যার মধ্যে মাত্র দুই মাস যুদ্ধবিরতি ছিল। বাকি সময় উপত্যকাটিতে নির্বিচার হামলা চালিয়ে ৬৭ হাজার ৬৮২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল এবং ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন। এটাকে গত মাসে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে জাতিগত নিধন বলে উল্লেখ করা হয়।

নির্বিচার হামলার পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে রাখায় ২৩ লাখ বাসিন্দার এই উপত্যকায় তীব্র খাদ্যসংকট চলছে এবং কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, গাজায় প্রতিদিন ত্রাণবাহী ৬০০টি ট্রাক ঢুকতে দেওয়ার কথা থাকলেও, সেই সংখ্যায় ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় ঢুকতে শুরু করেছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।gaza returning home

তবে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় পাঠানোর জন্য ত্রাণবাহী শত শত ট্রাক তারা প্রস্তুত করে রেখেছে এবং আজ রোববার থেকে ত্রাণবাহী গাড়ি গাজায় নিয়ে যাওয়ার আশা করছে।

এদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও দ্বিতীয় ধাপের শর্তগুলো নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা হয়নি, বিশেষ করে হামাসের অস্ত্রসমর্পণ ও গাজা শাসনে কারা যুক্ত হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান ভিন্ন। এতে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

হামাস এবং গাজার অপর দুই প্রতিরোধ সংগঠন ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) শনিবার যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে বিদেশিদের মেনে নেওয়া হবে না।

তবে প্রথম ধাপের পরও যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প, তিনি বলেন, ‘এটা (যুদ্ধবিরতি) কার্যকর থাকবে। লড়াই করতে করতে তারা সবাই (ইসরায়েল ও হামাস) ক্লান্ত।’ #

এইরকম আরও খবর

সর্বশেষ খবর