হ্যা, আপনাকেই বলছি-৩

রহমান উজ্জ্বল: আপনি কি এই বিপ্লবকে অস্বীকার করতে চান ? আপনি কি ছাত্র- জনতার এই মহা বিপ্লবকে মজা করার ছলে একটা চড়ুইভাতী ভেবেছেন? আপনার কাছে কি ছাত্র- জনতার এত এত রক্তের কোন মূল্য নেই? আপনি কি ভীষণ রকমের একপেশে চিন্তার অধিকারী বা আপনার ভাবনার জগতটা কি চরমভাবে গণ্ডিবদ্ধ?
হ্যাঁ, তাহলে আপনাকেই বলছি-। জেনে রাখুন, এত বেশি রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় কোন জোলাভাতি নয় বা চড়ুইভাতী নয়। বরং দেশের বেশিরভাগ মানুষের দ্বারা সংঘটিত একটি বিপ্লব। আমি মনে করি, যা এখনো চলমান। ইতিহাসের পাতায় এই গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে একটি মহা বিপ্লব হিসেবে স্থান করে নেবে। এর সাথে জড়িত বহু ঘটনাও অনেক ইতিহাসের সাক্ষী হবে। এই সহজ সত্যটা আপনার পঙ্কিল মন স্বীকার করল কি-না বা মেনে নিতে পারল কি-না সেটা তো আপনার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার।
এখানে পঙ্কিলতার কথা আসলো যে কারণে তা হল- ইতিহাসের একজন চরম নিষ্ঠুর, মিথ্যাবাদী স্বৈরাচারের পতনের পরও আপনারা কিছু লোক হাসি -মশকারার মতো করে বিপ্লবের বিপরীতে প্রতি বিপ্লবের স্বপ্নে মশগুল আছেন।
ঘটনা প্রবাহে আমরা দেখছি– ডাকাত লীগ, আন্দোলনের নামে সনাতনী ভাইদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, আদালতের মাধ্যমে কু ঘটানোর চেষ্টা, আনসারদের মাধ্যমে কু করার চেষ্ট, গ্রাম পুলিশ ভাইদের দিয়ে আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক- রিক্সা শ্রমিক ভাইদের আন্দোলনের কথা বলে উত্তেজিত করার চেষ্টা ইত্যাদি মারাত্মক সব দেশি -বিদশী চক্রান্ত। অর্থাৎ কোনোভাবেই থেমে নেই দেশ থেকে পলায়নকৃত স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী, তাদের দোসর এবং তাদের বিদশী প্রভুর চক্রান্ত।
সাম্প্রতিক বা চলমান মহা বিপ্লবের প্রতিটি ধাপে এত বেশি রক্ত ঝরেছে যে- এখনো দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় স্বজনহারাদের আত্মীয়-স্বজন এবং দেশবাসীর হাহাকার -মাতম চলছেই। চারপাশে কান পাতলে শোনা যায়, আহত ছাত্র-জনতার আর্ত চিৎকার। কিন্তু চক্রান্ত থেমে নেই। এর মধ্যে আবার দেশবাসী বিস্ময়ে লক্ষ্য করলো- আমাদের তথাকথিত বন্ধু দেশের চরম হটকারিতা। রাতের অন্ধকারে পানির বাঁধ ছেড়ে দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া হলো বাংলাদেশের বিরাট একটা অংশ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে একটি অরাজনৈতিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ সরকার বিরাজমান। রক্ত স্রোত, কান্না আর আকস্মিক বন্যার পানিতে দেশের মানুষ যখন হাবুডুবু খাচ্ছে- তখন তারা দেশের শাসন দন্ড হাতে নিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে বা করছে। জন মানুষের সাথে মিলে লড়াই করছে বন্যা ও রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে। আর এমন সময়ে আপনারা ব্যস্ত আছেন গোলাপানিতে মাছ শিকার করতে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশে বোধ হয় আন্দোলনের মৌসুম শুরু হয়েছে। যারা বিগত ১৬-১৭ টি বছর একটু টু- টা শব্দ পর্যন্ত করেনি তারাও এখন অনেক অনেক দাবি নিয়ে শাহবাগ কিংবা প্রধান উপদেষ্টার বাড়ির সামনে জমায়েত হচ্ছে। হই- হট্টগোল করছে, গুলি চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ঐসব তথাকথিত আন্দোলনের নেপথ্যের কারণ কি ? কারা উস্কানি দিচ্ছে ওইসব আন্দোলনে ? আপনি বা আপনারা নন তো ?
এখন প্রশ্ন হল- আপনারা কি দেশে ঘটে যাওয়া এই মহা বিপ্লবকে মানতে পারছেন না? এরকম ভয়ংকরতম জেনোসাইডকে অস্বীকার করতে চান ? এতগুলো তাজা প্রাণের বিসর্জন বা ত্যাগ আপনার বা আপনাদের কাছে কোন বিষয়ই নয় ?
এতগুলো সন্তান আর জনমানুষ মরলো-তারপরও আপনাদের কোন বিকার নেই ? রাতে ঘুমান কি করে ?আপনার বিবেক বোধ কি কয়লা হয়ে গেছে ? আপনার হৃদযন্ত্র, চোখ -এগুলো কি পাথর দিয়ে বানানো ? বুঝলাম ওগুলো না হয় পাথরের কিন্তু কোথাও কি একটুও স্পর্শ করেনি- ওইসব শহীদের রক্ত বা আত্মত্যাগ ? যদি আপনার ভেতর থেকে কোন স্পর্শ অনুভূত না হয় -তাহলে আপনি বহু আগেই মরে গেছেন। মরে ফেরাউনের মতো চিমসে হয়ে গেছেন । সেই চিমসে মার্কা দুর্গন্ধ শরীর- মন নিয়ে এখন শিয়ালের মতো খালি বাঁকা পথে উঁকিঝুঁকি মারছেন। এত তাড়াতাড়ি ছাত্র- জনতার মাইরের কথা ভুলে গেলে কি হবে ? দেশের মানুষও কি এত তাড়াতাড়ি ওইসব ভয়ংকর পৈশাচিক, বিভীষিকাময় দিনগুলো আর সন্তান হারানোর কষ্ট ভুলে যাবে ? কক্ষনো না।
আপনি ভালো হয়ে যাবেন- নাকি দুর্গন্ধ মমির মত জীবন কাটাবেন সেই বিবেচনা আপনার। তবু আপনাদের কাউয়া কাদেরের মত করেই বলি- “ভালো হয়ে যাও, মাসুদ”। নইলে ছাত্র- জনতা কইলাম আবার পেদাবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.