বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ’লীগ নেতা এজাবুল হক বুলির অপসারণ দাবি

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: মহারাজপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির অনেক অপকর্মের বিচার ও তাকে চাকরি থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ।
জেলা সদরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অনেকে অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি আওয়ামীলীগের এমপি মোঃ আব্দুল ওদুদ এর পিএস থাকাকালে অনেকের কাছ থেকে চাকরী দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া জেলা শহরের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স, কাপড়, হোটেল, রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন দোকানে আওয়ামী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে লাখ লাখ টাকার মালামাল বাকি নিয়ে আজো সে সব টাকা পরিশোধ করেননি। কেউ তার কাছে টাকা চাইতে গেলেই তিনি তাকে মামলা দেয়াসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে থাকতেন।
এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকী দিয়ে তার কাছে থাকা পিস্তল বের করে নাড়াচাড়া করতেন, যাতে সবাই তাকে ভয় করে তার কাছে টাকা না চান। তার কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা পাবেন এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা শহরের মেসার্স সৌদিয়া স্টীলের মালিক মোঃ আব্দুল রাকিব, কামাল ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক ইকবাল আহম্মেদ, বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান, সেতু হার্ডওয়ারের মালিক নাজিম উদ্দিন, সোনালী আইপিএস এর মালিক খোকন, নিউমার্কেটের মোশাররফ ক্লথ স্টোর এর মালিক, রাজিব সুজুকি মটর সাইকেল এর মালিক, আলাউদ্দীন চাইনিজ হোটেল এর মালিক, শামীম ম্যাটস এর মালিক, মেসার্স সানাউল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক আলহাজ¦ মোঃ আমিনুল ইসলাম, মেসার্স সোনালী ট্রেডার্স এর মালিক প্রমূখ।
এদিকে, মহারাজপুর ইউনিয়নের অনেকে জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালে জমি-জমাসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিচারের নামে বাদি-আসামীর কাছ থেকে জামানত ও জরিমানা নিয়ে কাউকেই সেই টাকা ফেরত বা বিতরণ করেননি।
এ বিষয়ে তারা জানান, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তৎকালীন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক তাজকিরউজ্জামান এর দপ্তরে জমা হয় এবং তিনি এর শুনানিও করেছিলেন। মহারাজপুর ইউনিয়ন এর এমন অনেকে দাবি করেছেন যে, বিভিন্ন অজুহাতে তাদের জামানত ও বিচারের রায়ের টাকা ফেরত দিতে এজাবুল হক বুলি গড়িমসি করে আসছিলেন। আর তার চেয়ারম্যান পদ চলে যাবার পর তিনি মহারাজপুর এলাকায় আর যাননা।
ফলে তার দেখা না পাওয়ায় কেউ কেউ বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজে যোগাযোগও করেন। কিন্তু তিনি কলেজে বেশিরভাগ না থাকায় তাকে পাওয়া যায়না বা পেলেও তিনি তাদের সাথে দেখা করেননা বা ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন করেন।
মহারাজপুর ইউনিয়নের তার সময়ের সাবেক কয়েকজন মেম্বার ও কয়েকজন চৌকিদার জানান, প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে ৯ জন মেম্বার তার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তাকে এ টাকা সরকারি ফান্ডে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের ফান্ডে অদ্যবধি এ টাকা ফেরত প্রদান করেননি বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্যরা।
এছাড়া তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হলে তিনি রিট করে মামলা স্থগিত করেন, যদিও মামলাটি আজো ঝুলে আছে।
অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি মোঃ আব্দুল ওদুদ এমপির বিশ^স্ত লোক হওয়ায় ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বালুমহল, গরু চোরাচালান, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, থানার দালালিসহ সব কিছু পরিচালনা করতেন। এতে করে তার দৌরাত্ম চরমে পৌছে। তার কথা না শুনলে তিনি যে কোন মানুষকে কোন না কোন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করতেন। এমনকি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়েও দিতেন অনেককে।
তিনি আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সব কিছু আদায় করেছেন। এমনকি তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এক ডজন শিক্ষককে ডিঙিয়ে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। শোনা যায় তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগে আব্দুল ওদুদ এমপি সভাপতি হিসেবে কোন স্বাক্ষর করেননি।
ওদুদ এমপির স্বাক্ষর জাল করে তিনি কলেজের কাগজ-পত্র তৈরী করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়েছিলেন। তিনি কলেজে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় স¤প্রতি দৈনিক মানবজমিন, সমকালসহ অনেকগুলো পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে, কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট সকল অফিস-আদালত খূলে দেয়া হলেও তিনি কলেজে আসেন ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার। আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী আমলের সকল অনিয়মের বিচার এবং তাকে কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করাতে হবে বলে দাবি করেছেন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়া জনগণ।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ এর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী মানুষ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.