হামাসকে নির্মূল করা যাবে না, স্বীকার করলেন আইডিএফ মুখপাত্র

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ)-এর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করা যাবে না। বুধবার (১৯ জুন) এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
তার এই মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় আট মাস ধরে যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, সেটির লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না দেশটি।
এছাড়া আইডিএফ মুখপাত্রের এমন মন্তব্যে গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও উত্তেজনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এসব কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাসকে ধ্বংস করা, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার কাজ সোজা কথায় জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া। হামাস একটি মত, হামাস একটি দল। এটি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। যারা মনে করেন আমরা হামাসকে নির্মূল করতে পারব তারা ভুল করছেন।
হাগারি সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি সরকার যদি বিকল্প খুঁজে না পায় তাহলে গাজা উপত্যকায় হামাসের অস্তিত্ব থাকবে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা যুদ্ধের একটি লক্ষ্য হিসেবে হামাসের সামরিক ও শাসন করার সক্ষমতা ধ্বংস করাকে বুঝিয়েছে। তবে আইডিএফ এই লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এই বিবৃতির পর আইডিএফ মুখপাত্রের ইউনিট আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের নির্ধারিত যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে হামাসের সামরিক ও শাসন করার সক্ষমতা ধ্বংস করার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাক্ষাৎকারে হাগারি হামাসকে একটি আদর্শ ও মত হিসেবে নির্মূলের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এর বাইরে ওই মন্তব্য নিয়ে কোনও দাবি করা হলে তা অপ্রাসঙ্গিক।
গত মাসেও এক প্রশ্নের জবাবে হাগারি প্রায় কাছাকাছি মন্তব্য করেছিলেন। ওই সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, গাজায় অভিযান শেষ করা এলাকাগুলোতে পুনরায় ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানের কারণ কি মূলত উপত্যকা পরিচালনায় হামাসের বিকল্প নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার ফল। জবাবে তিনি বলেছিলেন, কোনও সন্দেহ নাই যে গাজা শাসনে বিকল্প হাজির করা হলে হামাসকে চাপে ফেলবে। কিন্তু এটি রাজনৈতিক মহলের সিদ্ধান্তের বিষয়। 
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মে মাসে গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনার জন্য নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হামাসের বিকল্প খুঁজে না পেলে তা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অর্জনকে ধূলিসাৎ করতে পারে। কারণ হামাস পুনরায় সংগঠিত ও উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
নেতানিয়াহুকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক ও বেসামরিক শাসনের কথা বিবেচনা না করতেও আহ্বান জানিয়েছিলেন গ্যালান্ট। এমন কিছুর পক্ষে কথা বলছেন নেতানিয়াহুর জোট সরকারের উগ্র-ডানপন্থি কয়েকজন সদস্য।
ইসরায়েলি টেলিভিশনের খবরে দাবি করা হয়েছে, আইডিএফ প্রধান হারজি হালেভি ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেট প্রধান রনেন বার সম্প্রতি কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। গত সপ্তাহে ন্যাশনাল ইউনিটি নেতা বেনি গান্তজ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা হাজির করতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরও নেতানিয়াহু তা করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর পদত্যাগ করেন তিনি।
এছাড়া সেনাবাহিনী ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বিরোধে সম্প্রতি আরও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজায় একটি সড়কে যুদ্ধে কৌশলগত বিরতির সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তবে আইডিএফ বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর নির্দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশের পরিমাণ বাড়াতে বলেছেন।
বিরোধের ইঙ্গিত নিশ্চিত করে রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেতানিয়াহু দিয়ে বলেছেন, হামাসের সক্ষমতা ধ্বংসের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যা সব সময় সামরিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেনি।
সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী নিয়ে আমাদের একটি রাষ্ট্র রয়েছে, রাষ্ট্র নিয়ে সেনাবাহিনী নয়।
নেতানিয়াহুর বড় ছেলে ইয়াইর সম্প্রতি সামরিক নেতাদের সমালোচনা করছেন। বিশেষ ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য তিনি তাদের দায়ী করছেন। যদিও শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের মতো নেতানিয়াহু বারবার ওই হামলায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.