রাজশাহী বিভাগে করোনার হটস্পট নওগাঁ জেলা

স্টাফ রিপোর্টার: একদিন আগেও রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ ছিলো জয়পুরহাটে। এখন ৪৯ জনের করোনা সংক্রমণ নিয়ে বিভাগের করোনা হটস্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে নওগাঁ।

এই ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, যেসব ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের সাথে যেসব ব্যক্তি সংস্পর্শে এসেছে। তাদেরকে আলাদা করে আমরা আইসোলেশন ও কোরিয়েন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছি। যাতে করে তাদের দ্বারা অন্যদের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে না পারে।

নওগাঁ ও জয়পুরহাটে বেশি হওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জেলায় ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশিমাত্রায় এসেছে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে আমাদেরকে এখন প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। যাতে করে অন্যরা সংক্রমিত না হয়। আমি সিভিল সার্জনদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নিজ নিজ জেলায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছি। যাতে করে না বাড়ে আক্রান্তের সংখ্যা।

আর নুমনা সংগ্রহের ব্যাপারে আরও যত্নশীল হতে বলা হয়েছে। ঢাকায় আরও নুমনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো একসাথে আসলে সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি আক্রান্তগুলোকে যত তাড়াতাড়ি আলাদা করা যায় ততো ভালো।

তবে দোকানপাট ও মসজিদ খুলে দেয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিকটা ঠিক রাখার জন্য সিদ্ধান্ত সঠিক আছে। তবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যেতে না পারে। সেজন্য প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্তক থাকতে হবে।

রাজশাহী বিভাগে গতকাল বুধবার (০৬/০৫/২০২০) পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬২ জনে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল ১৫৩ জন। তবে বগুড়া ল্যাবের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ বগুড়ার ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে এই অঞ্চলের করোনার হটজনে পরিণত হওয়া নওগাঁ, জয়পুরহাটের রোগীদের নমুনা পরীক্ষা।

এছাড়াও বগুড়া সিরাজগঞ্জের নমুনাও পরীক্ষা হচ্ছে বগুড়াতে। এই চারটি জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ বাদে অন্য তিনটি জেলায় রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের রোগী পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার (৬ মে) রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) করোনা ল্যাবে আরও ৯ জনের পজিটিভ এসেছে। বুধবার তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আক্রান্ত সবার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।

এ নিয়ে এ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একদিনেই চারগুন বেড়ে গেলে। ফলে এখন এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ জনে। এর আগে রাজশাহীজুড়ে করোনার প্রভাব বিস্তার করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলা ছিল অনেকটায় ভিন্ন। এ দুটি জেলাতে দুইজন করে করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল।

তবে মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জে আরও একজনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়ার পরে বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয়জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জজুড়ে করোনা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে নাচোলের এক স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তিনি আত্মগোপন করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে মঙ্গলবার বিভাগে ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জনই নওগাঁর বাসিন্দা। আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন করোনা প্রতিরোধের সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ সদস্য।

নতুন করোনা ধরা পড়েছে বগুড়ায় দুইজন এবং সিরাজগঞ্জে একজন। সবমিলিয়ে বিভাগে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫৩ জন। একদিন আগেও এই সংখ্যা ছিলো ১১৮। নতুন করে কেউ মারা যাননি, সুস্থও হননি। এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন মাত্র তিনজন। আর মারা গেছেন দুইজন।

গত ১০ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত বিভাগের আট জেলায় যে ১৫৩ জনের করোনা ধরা পড়েছে তাদের ৪৯ জন নওগাঁর বাসিন্দা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে জয়পুরহাটে। এছাড়া বগুড়ায় ২৫ জন, রাজশাহীতে ১৭ জন, পাবনায় ১৩ জন, নাটোরে ১০ জন, সিরাজগঞ্জে তিনজন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জয়পুরহাটে ৩৩ জন, বগুড়ায় ২২ জন এবং রাজশাহীতে দুইজন। এ পর্যন্ত বগুড়ায় দুইজন এবং পাবনার একজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়াও রাজশাহী ও নাটোরে একজন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ৭৪৮ জনকে। এই সময়ে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে বেরিয়েছেন ৫৬২ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে গেছেন তিনজন। আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে ১০ জনের। নতুন করে তিনজনকে আইসোলেশনে নেয়া হলেও আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন দুইজন।

গত ১০ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ২৫ হাজার ৫৬৬ জনকে। এদের মধ্যে ১৭ হাজার ৩৯৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন।

প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ৩৬৫ জনকে। এদের ১৭৭ জন প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এ পর্যন্ত ২০২ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হলেও ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৪৮ জন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর স্টাফ রিপোর্টার মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.