আদিতমারীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী গর্ভ হতে বালু উত্তোলনের একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে দাখিল করেন কমলাবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত চরিতাবাড়ী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক তাজুল ইসলাম।
অভিযোগে জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যান্তরস্থ নদী খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের নামে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলাধীন স্বর্ণামতি নদীর কিঃমিঃ ৩২.০০ হতে কিঃমিঃ ৩৯.০০ মোট ৭.০০ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ।
কাজের অবস্থান আদিতমারী উপজেলা, প্যাকেজ নম্বর-লালঃ ডাব্লিউ -০৮/২০১৮-১৯, প্রাক্কালিত মূল্য (লক্ষ টাকা) ৩৯৮.৭৩, চুক্তিমূল্য (লক্ষ টাকা) ৩৫৮.৮৫ ব্যয়ে লালমনিরহাট পওর বিভাগ-বাপউবি-লাল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এর অধিনে তাজুল -নোনা (জেভি) শরিফ ম্যানশন, ৪র্থ তলা, ৫৬,৫৭ মতিঝিল বা/এ ঢাকা- ১০০০ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে।
ইতিপূর্বে স্কেভেটার মেশিন দিয়ে নদী খনন কাজ শুরু করে। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের যোগসাজসে স্থানীয় আজাহার ও মোস্তাককে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাস থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ভাদাই ইউনিয়নের ওমর কাজী মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায় ও কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্ডিমারী নামক স্থানের নদী খনন করে বালু দুধারে ফেলে বাঁধের মত করে রাখতে চুক্তি করে।
সেই চুক্তি মোতাবেক নদীর বিভিন্ন জায়গায় ৭/৮টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তারা সুযোগ পেয়ে দু-ধারে বালু না ফেলে নদীর বিভিন্ন জায়গায় বালুগুলো বিক্রি করার উদ্দ্যেশ্য বিশাল স্তুপ করে রাখে।
ইতিপূর্বেও একটি চক্র শতশত ট্রাকযোগে বালু বিক্রি করে থাকে। বালু উত্তোলনের ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত আবাদী জমি। বার,বার তাদেরকে নিষেধ করা সত্যেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। তাছাড়াও প্রকৃত নদী না খুড়ে তাদের সুবিধা অনুযায়ী ব্যাক্তিগত জমির উপর দিয়ে নদী খোড়া হচ্ছে।
এ নিয়ে প্রশাসনকে বারবার জানালও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমন কি প্রশাসন বলতে থাকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নাকি নদী খুরতে নিষেধ নেই।
বালু উত্তোলন করা হলেও এসব মেশিন বন্ধের উদ্দ্যোগ নেই উপজেলা প্রশাসনের। ফলে দিন দিন অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। আবার অনেক সময় উপজেলা প্রশাসন এসব অবৈধ মেশিনকে বৈধ বলে দাবীও করে আসছেন।
সরকারীভাবে এসব মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও এর ব্যত্যয় ঘটেছে আদিতমারীতে। উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী স্পার বাধ, গোর্বধন চরসহ ৪ থেকে ৫টি স্পটে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন জেনেও অনেকটা না জানার ভ্যান করে আছেন।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নদী খননের কাজ চলছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের জন্য স্কেভেটার মেশিন দিয়ে নদী খনন করার কথা থাকলেও এ নিয়মনীতি মানছেন না তারা। তারা অবৈধভাবে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করেই চলেছেন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে প্রশাসনের লোক অনেকটা অসহায়। তারাও তাদের এ অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। আর এ কারণে দিনের পর দিন নদীতে থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
তবে মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও চালানো হচ্ছে। জেল জরিমানাও হচ্ছে কিন্তু তার পরেও থেমে নেই অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন। তবে এলাকাবাসী মনে করেন, এসব বালু উত্তোলনের নিদিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। তারা আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য আইন কি আলাদা?
নিয়ম অনুযায়ী স্কেভেটার মেশিন দিয়ে নদী খননের পর নদীর দুপারে বালুগুলো স্তুুপ করে রাখার কথা। কিন্তু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে কারো পুকুর আবার কারো ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা লাভবান হচ্ছেন। আর হুমকির মুখে পড়ছেন পাশ্ববর্তী জমির মালিকরা।
এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগকারী আদিতমারী সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না বলে দাবী করেন।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন,তবে উত্তোলনকৃত বালু কারো ব্যক্তিস্বার্থে নয়। এসব বালু দিয়ে নদীর দুপার বেঁধে দিতে হবে। তারপরেও তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে দাবী করেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.