৯ গুণ বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে মালয়েশিয়াগামীদের কাছ থেকে

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হলেও সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের ৯ গুণ বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের টাকা তুলতে একজন শ্রমিককে সে দেশে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই বছর হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হবে। তারপরই উঠবে চালানের টাকা।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানিতে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পৃত্ত, তাদের মধ্যে কোনো কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকের ‘বাড়াবাড়ির’ কারণে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি যেকোনো সময় অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এ দিকে মালয়েশিয়ায় লোক প্রেরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা শুরু করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরুর পর প্রায় আট লাখ কর্মী দেশটিতে চলে যায়। কিন্তু এদের বেশির ভাগ কর্মীই সে দেশে গিয়ে চাকরি পাননি। একপর্যায়ে মানবেতর জীবন কাটিয়ে খালি হাতে তারা দেশে ফিরে আসেন। মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলে মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজার ‘ফ্রিজ’ করার ঘোষণা দেয়। দীর্ঘদিন দেশটিতে কর্মী যাওয়া বন্ধ থাকার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সরকার টু সরকার ফর্মুলায় (জিটুজি) শ্রমিক পাঠাতে এমওইউ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। মাত্র ২৭ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়া শুরু হলেও জনশক্তি রফতানিকারকদের একটি গ্রুপের গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে ওই ফর্মুলায় ১০-১১ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি।

জিটুজি ফর্মুলা ভেঙে যাওয়ার পর ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠাতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে নতুন করে এমওইউ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তবে এবার শ্রমবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে মালয়েশিয়া সরকার হাতেগোনা কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে শ্রমিক পাঠানোর দায়িত্ব দেয়। সে দেশে প্রতি কর্মী যেতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিবাসন ব্যয় সর্বোচ্চ ৪২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে। এ টাকার মধ্যে বিমানভাড়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সবকিছুই থাকবে। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর গত বছরের ১০ মার্চ ৯৮ জন শ্রমিক নিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারো বাংলাদেশীরা প্রবেশ করতে শুরু করে। এবার বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রির মর্যাদা দেয়া হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের ধারেকাছেও নেই বিদেশগামীরা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, অভিবাসন ব্যয় এখন সরকার নির্ধারিত খরচের অতিরিক্ত ৯ গুণ টাকা বেড়েছে। তার মানে একজন শ্রমিককে মালয়েশিয়া যেতে হলে কমপক্ষে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। তার বড় একটি অংশ দালালদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ করে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও আজ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর কাছে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলেও তিনিও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ার কথা বলে আসছেন। যার কারণে মালয়েশিয়া যেতে এখন অভিবাসন ব্যয় দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক শিপাং বিমানবন্দরে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে একটি এজেন্সির পাঠানো এক কর্মী আক্ষেপ করে বলেন, আমি মালয়েশিয়ায় এসেছি চার লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে। তবে আমার ভাতিজা এসেছে চার লাখ টাকা খরচ করে। বেতন পাবো ১০০০ রিংগিট (২২০০০ টাকা) ওভারটাইম পাবো কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। এত টাকা দিয়ে কেন এ দেশে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী আর করব। এখন তো চলেই এসেছি? এখন ঠিকভাবে কোম্পানিতে চাকরি পেলেই হলো। আপনি যে টাকা খরচ করে এসেছেন সেই টাকা তুলতে তো কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই বছর লেগে যাবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তার বক্তব্য হচ্ছে : আমি দালালের খপ্পরে পড়ে গেছি।

গতকাল নাম না প্রকাশের শর্তে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার এক নেতা বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার পর এ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি লোক দেশটিতে চলে গেছে। আরও অর্ধলক্ষাধিক যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জন্যই প্রসেসিং খরচ নেয়া হচ্ছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা করে। আর এ টাকাগুলো এজেন্সির মালিকেরা নেয়ার সময় কোনো স্লিপ দিচ্ছে না। তাদের ধারণা, এ টাকার বড় একটি অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে। তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তের দাবি জানান। ইদানীং প্রসেসিংয়ের টাকা আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা তারা করছে। সেই হিসাব শুরু হলে মালয়েশিয়ায় একজন কর্মী যেতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এতে কোনো সন্দেহ নেই বলে তাদের অভিযোগ। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.